Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

আর্সেনিকেই কি অকল্যাণ কল্যাণীতে?

মাটির নীচের জলের চরিত্র নিয়ে এখনও সন্দেহ ঘোচেনি।

 ভরসা এমন পাম্পে। নিজস্ব চিত্র

ভরসা এমন পাম্পে। নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০২:২৪
Share: Save:

মাটির নীচের জলের চরিত্র নিয়ে এখনও সন্দেহ ঘোচেনি।

আর্সেনিক-বিষ কি এখনও ঘাপটি মেরে আছে, নাকি ঝাড়ে-বংশে নির্মূল হয়েছে, এর সরাসরি উত্তর প্রশাসন, পুরসভা বা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর— কেউই স্পষ্ট করে তাঁদের দিতে পারেনি। ফলে সেই জল চলে কি না, সেই দোলাচলও কাটেনি।

নানা সরকারি প্রকল্পে কল্যাণীতে পানীয় জল সরবরাহ হয়। কেউ-কেউ সেই জল খান, কেউ আবার কেনা জলে ভরসা করেন। কিন্তু সেখানেও বিস্তর ফাঁক। মওকা বুঝে ব্যাঙের ছাতার মতো জল বিক্রির সংস্থা গড়ে উঠেছে। তাদের অনেকেই প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে যেখানে পারছে পাম্প লাগিয়ে জল তুলে জারে ভরে ‘পরিশ্রুত’ বলে বেচে দিচ্ছে। সেই জলেও আর্সেনিক রয়েছে কিনা তার কোনও নজরদারি কিন্তু নেই। এ এক দুষ্টচক্রের মতো। কল্যাণীর মানুষ যতই আর্সেনিক থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন, ততই সে নানা দিক থেকে উঁকিঝুঁকি দেয়।

নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের মতো আর্সেনিকের প্রাবল্য কল্যাণীতে নেই ঠিকই। কিন্তু আর্সেনিক মরণ থাবা না-বসালেও এক সময়ে এই শহরের পুর নির্বাচন আবর্তিত হত বিশুদ্ধ পানীয় জলের বিষয় ঘিরে। বামপন্থী বোর্ডের বিরুদ্ধে ভূগর্ভস্থ দূষিত জল সরবরাহের অভিযোগ আনতেন বিরোধীরা। এখন সময় ও সরকার পাল্টেছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর, কোথাও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর, কোথাও আবার কল্যাণী ও গয়েশপুর পুরসভাকে জল দিচ্ছে কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভলপমেন্ট অথরিটির প্রকল্প। ২০০২ থেকে উত্তর ২৪ পরগনার চৈতন্যডোবা থেকে গঙ্গার জল তোলা হচ্ছে। তা শোধিত হচ্ছে কল্যাণী-ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে কল্যাণী পুর এলাকায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত প্রশাসন বা পুরসভা কল্যাণীর পানীয় জলকে ‘সম্পূর্ণ আর্সেনিক-মুক্ত’ বলে ঘোষণা করতে পারেনি।

কল্যাণীর পুরপ্রধান সুশীলকুমার তালুকদারের দাবি, ‘‘বছরে দু’বার করে ভূগর্ভস্থ জলের মান ও তাতে আর্সেনিকের পরিমাণ মাপা হয়। ছ’মাস আগেও পরীক্ষা হয়েছে। তাতে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি।’’ তা হলে কি কল্যাণীকে আর্সেনিক-মুক্ত বলা যায়? নির্দিষ্ট উত্তর মেলেনি। প্রাক্তন পুরপ্রধান শান্তুন ঝায়ের কটাক্ষ, ‘‘আগে সবাই আর্সেনিক নিয়ে গলা ফাটাতেন। এখন সব চুপচাপ। যেন কল্যাণী থেকে আর্সেনিক বেমালুম উধাও হয়ে গিয়েছে!’’

নদিয়ার ১৭টি ব্লকে আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। কল্যাণীর কোল ঘেঁষা চাকদহ ব্লকে সেটা বাড়াবাড়ি রকম। শহরাঞ্চলগুলিও এর থেকে মুক্ত নয়। ফলে, জেলার বেশির ভাগ পুর এলাকায় ভূগর্ভস্থ জল খাওয়ার অভ্যাসই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ-এর একাধিক গবেষকের মতে, এ রাজ্যের আর্সেনিকপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে কল্যাণী এখনও অন্যতম। প্রতি লিটার জলে ০.০৫ মিলিগ্রামের বেশি থাকা মানেই তা মানব শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। এই বিষ শরীরে ঢোকার পরে উপসর্গ প্রকাশ পেতে ছ’মাস থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় নেয়। এর থেকে কিডনি, লিভার অকেজো হয়ে পড়ে। ক্যানসারও হয়।

কল্যাণীর কলোনি এলাকাগুলিতে অনেক মানুষ এই ধরনের উপসর্গের শিকার হয়েছেন অতীতে। দীর্ঘদিন বিশুদ্ধ পানীয় জলের দাবিতে অসংগঠিত ভাবে আন্দোলন হয়েছে। সেই চাপেই বিভিন্ন জলপ্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও মূল সমস্যাটা মেটেনি। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Arsenic Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy