Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Saree

দোকান ফাঁকাই, জামাকাপড় চলে যাচ্ছে বাড়ি-বাড়ি

পাইকারি হাট থেকে পুজোর কেনাকাটা করতে ফি সপ্তাহে আসতে হচ্ছে এখন।  মণিকা একা নন। এমন অনেকেই লকডাউনের পরে এই ব্যবসায় নেমেছেন। দাঁইহাটের গ্রামেই মণিকার স্বামীর কাপড়ের ব্যবসা ছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নদিয়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৫২
Share: Save:

দুপুরে নবদ্বীপের ভাঙা হাটে পছন্দসই ছাপা শাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন মণিকা দেবনাথ। শাড়ির স্তূপে বসে ভ্যাপসা গরমে ঘামতে ঘামতে বেছে রাখছিলেন ৪০০-৫০০ টাকা দামের শাড়িগুলো।

শহর নবদ্বীপ থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে বর্ধমানের দাঁইহাট থেকে বছর তিনেক হল নিয়মিত হাটে আসছেন মণিকা। শাড়ি বাদেও শায়া, ব্লাউজ, নাইটি, গামছা, বিছানার চাদর থেকে অন্তর্বাস, সবই তিনি কিনে নিয়ে যান নিজের গ্রামে। পরিচিতদের কাছে স্বল্প লাভে সে সব বিক্রি করেই সংসার চলে। পাইকারি হাট থেকে পুজোর কেনাকাটা করতে ফি সপ্তাহে আসতে হচ্ছে এখন। মণিকা একা নন। এমন অনেকেই লকডাউনের পরে এই ব্যবসায় নেমেছেন। দাঁইহাটের গ্রামেই মণিকার স্বামীর কাপড়ের ব্যবসা ছিল। লকডাউনে সেই ব্যবসা গুটিয়ে যায়। সে বারই প্রথম অল্প কাপড়জামা হাট থেকে কিনে গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি শুরু করেছিলেন মণিকা। তিনি বলেন, “লকডাউন শেষে সাইকেল চালিয়ে হাটে এসেছি। আমাদের ক্রেতারা যেমন দামের জিনিস কিনতে পারবেন, সে সব অল্প করে প্রতি সপ্তাহে নিয়ে যাই। নগদে নয়, আমাদের বিক্রি হয় সাপ্তাহিক কিস্তিতে।”

সুবীর বিশ্বাস আর প্রতিমা বিশ্বাস এসেছিলেন জালুইডাঙা থেকে। লকডাউনে চাকরি গিয়েছিল। তার পর থেকেই বাড়ি-বাড়ি ঘুরে শাড়ি-জামাকাপড় বিক্রির কাজে লেগেছেন দু’জনে। সুবীর বলেন, “গ্রামের লোক আমাদের ভরসা করেন এখন। ফলে চট করে শহরে আসতে চান না।” প্রতিমা বলেন, “দুটো লোকের গ্রাম থেকে শহরে আসতে-যেতে যে খরচ হয় তার থেকে কম পড়ে আমাদের কাছে জিনিস কিনলে।”

এঁদের তুলনায় পুরোনো কারবারি তাপস সাহা রায়। বর্ধমানের দোগাছিয়ার বাসিন্দা তাপস অবশ্য বাড়ি-বাড়ি নয়, ছোট-ছোট গ্রামীণ হাটে কাপড়জামা বিক্রি করেন। নিজের গ্রামের হাট, জামালপুর এবং কুক সিমলার হাটে পাঁচ দিন কেনাবেচা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “এখন বহু জন এ কাজে নেমে পড়েছেন। গ্রামের বিরাট অংশের মানুষ আর কেনাকাটা করতে বেরোতেই চাইছেন না।”

এই সব ছোট ছোট গ্রামীণ বিক্রেতারা বাজারের প্রচলিত কেনাবেচার ছকে বদল ঘটিয়ে দিয়েছেন বলে মানছেন দোকানিরাও। নবদ্বীপ হাটের পাইকারেরা জানাচ্ছেন মণিকা, প্রতিমা, তাপসেরা কখনও অনেক টাকার জিনিস কেনেন না। অল্প কয়েক হাজার টাকার কেনাকাটা। কিন্তু ভীষণ নিয়মিত। এমনও দেখা যাচ্ছে, গ্রামে কারও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ঘাটকামানের জামাকাপড়ের অর্ডার নিয়ে চলে আসছেন। ফর্দ মিলিয়ে কিনে পৌঁছে দিচ্ছেন। নদিয়ার বণিকসভার যুগ্ম সম্পাদক গোকুলবিহারী সাহা বলেন, “অসংগঠিত ক্ষেত্র হলেও ক্রমশ প্রথাগত দোকানদারদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছেন ওই সব বিক্রেতারা। অন্য কোনওও খরচ না থাকায় শহরের দোকানের থেকে সামান্য ফারাকে বিক্রি করতে অসুবিধা হচ্ছে না ওঁদের। কেমন করে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে হয় তা শিখে নিয়েছেন গ্রামীণ ওই বিক্রেতারা। ” পুজোর বাজার করতে গ্রাম উজিয়ে শহরে আসার তাগিদ কি ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে? প্রায় ফাঁকা পুজোর বাজারে এই প্রশ্নটাই হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Saree Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy