Advertisement
১০ জানুয়ারি ২০২৫
Cyclone Amphan

ক্ষতিপূরণ-ক্ষোভ তুঙ্গে, টাকা শাসকদলের ঘনিষ্ঠদের

ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃত ঘরহারা মানুষের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছোয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মনিরুল শেখ
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০৫:৩৯
Share: Save:

আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি করা নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাসক দলের নেতা-কর্মী অথবা সমর্থক। কল্যাণীর মদনপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুর্নীতির অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই এ বার একই অভিযোগে তোলপাড় চাকদহ ব্লকের অর্ন্তগত তাঁতলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। এ ব্যাপারে বুধবার চাকদহের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে।

ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকৃত ঘরহারা মানুষের কাছে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছোয়নি। ব্যক্তিপিছু ২০ হাজার টাকা প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে তাতে স্থানীয় শাসকদলের নেতাদের ঘনিষ্ঠ প্রচুর লোকের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। এবং তাঁদের বেশিরভাগেরই বাড়ি পুরোপুরি

ভেঙে যায়নি।

তাঁতলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ১৩১ জনের ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি হয়েছে। তাঁদের প্রায় সকলেই টাকা পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বেআইনি ভাবে অনেককে টাকা পাইয়ে দিয়েছেন প্রধান রাধা দে এবং ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ সরকার। ওই অভিযোগপত্রে ৮ জনের নাম রয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা ঘর পুরোপুরি ভেঙে পড়া সত্ত্বেও ক্ষতিরপূরণ পাননি। অথচ, ঘরের তেমন কোনও ক্ষতি না-হতেই অ্যাকাউন্টে টাকা চলে এসেছে ৮ জন সম্পন্ন ও প্রভাবশালীর। এঁরা কেউ প্রধানের ঘনিষ্ঠ, কেউ পঞ্চায়েতের কর্মচারী বা ব্লক তৃণমূলের সভাপতিদের কাছের লোক। এ নিয়ে চাকদহের রাজনীতি সরগরম।

বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ চরমে। এমনকি ওই পঞ্চায়েতের এক সদস্য জানালেন, তাঁরা কয়েক জন প্রথম থেকেই ওই তালিকায় বিরোধী ছিলেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী সে সব কানে তোলেনি।

প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ বর্ধনের স্ত্রী ঝুমা বর্ধনের নাম রয়েছে ক্ষতিপূরণ প্রাপকের তালিকায়। এ দিন ঝুমার বাড়িতে গেলে তিনি জানান, ঝড়ের রাতে তাঁর ঘরের টিন উড়ে গিয়েছিল। পরে তা চালে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘরের গাঁথনিটা ইটের হওয়ায় তার কোনও ক্ষতি হয়নি। তাঁকে জানানো হয়, সরকার তো ২০ হাজার টাকা দিচ্ছে বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে ঝুমাদেবীর বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতের লোক আবেদন করতে বলেছেন তাই আবেদন করেছিলাম।’’

টাকা পেয়েছেন ওই পঞ্চায়েতের সদস্য রীতা ঘোষের পরিবারও। এ দিন রীতাদেবী বলেন, ‘‘আমার ঘরের প্রায় ৩০টি টালি ভেঙে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণের টাকার একাংশ দিয়ে ওই টালি কিনব।’’ কিন্তু পুরো টাকা তো তাতে লাগবে না। তা ছাড়া তাঁর বাড়ি সম্পূর্ণ ভাঙেনি। তা হলে তিনি কেন ক্ষতিপূরণ পাবেন? তখন রীতাদেবী বলেন, ‘‘প্রয়োজনে আমি টাকা ফেরত দেব।’’

ওই পঞ্চায়েতের এক সদস্য বলছেন, ‘‘এমন দুই-এক জনের নাম ওই তালিকায় রয়েছে, যাঁরা আগে সরকারি প্রকল্পে ঘর তৈরির টাকা পেয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার ভাল বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁদের নাম তালিকায় থাকা দুর্ভাগ্যজনক।’’ এ ব্যাপারে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রাধা দে বলেন, ‘‘প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ব্লকের কর্মীরা বাড়ির অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন, তবেই টাকা মিলেছে। ফলে বিষয়টি ব্লকের লোকজনই ভাল বলতে পারবেন।’’ এ ব্যাপারে চাকদহের বিডিও দেবজিৎ দত্তকে বার-বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। ফলে তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। আর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ সরকার বলেন, ‘‘আমি যতদূর জানি, প্রকৃত গরিবেরাই টাকা পেয়েছেন। তবে কোথাও কোনও অনিয়ম হলে প্রশাসন তদন্ত করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy