ছাপানো সেই কুপন। — নিজস্ব চিত্র।
তোলাবাজি নিয়ে পুলিশ থেকে নিজের দলের নেতা-কর্মীদের বার বার হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু তাতে কাজ কতটা হচ্ছে? প্রশ্ন উঠছে, কারণ তাঁর নির্দেশের পরেও বারবার এ ধরনের অভিযোগ উঠছে তাঁরই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ বার অভিযোগ উঠেছে বাদকুল্লায়।
তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বাদকুল্লার ছোট গাড়ি চালকদের সংগঠনের বিরুদ্ধে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেছেন অটোচালকরা।মঙ্গলবার বাদকুল্লা স্টেশন থেকে বিভিন্ন রুটের অটোচালকরা হাঁসখালি ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখান। জোর করে তোলা আদায় করা হচ্ছে বলে তাঁরা বিডিওর কাছে অভিযোগ করেন। বিডিওর হস্তক্ষেপে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও উত্তেজনা থেকে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে কোনও মুহূর্তে বড় অশান্তির আশঙ্কা করছেন তৃণমূল নেতৃত্বেরই একাংশ।
বাদকুল্লা স্টেশন থেকে হাঁসখালি, শান্তিপুর, আড়ংঘাটা, কুলগাছি, কালীরহাট ও মামজোয়ান রুটে পাঁচশোর মতো অটো চলে। প্রতিটি রুটেই চালকদের আলাদা আলাদা সংগঠন আছে। সেই সঙ্গে বাদকুল্লায় চারচাকা ছোট গাড়ির চালকদের ‘বাদকুল্লা ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে সংগঠনটি অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং বেশ পুরনো। এই সংগঠনটি সরাসরি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত না হলেও সদস্যরা প্রায় সকলেই স্থানীয় এবং তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ট বলে পরিচিত। অভিযোগ, সম্প্রতি এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সমস্ত রুটের অটোচালকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, বাদকুল্লা স্টেশন থেকে অটোয় যাত্রী তুলতে হলে প্রতিদিন প্রত্যেক অটো চালককে তাঁদের ১০ টাকা করে দিতে হবে। সেইমত তাঁরা কুপনও ছাপান। কিন্তু অটোচালকরা সেই দাবি মানতে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়।
অটোচালকদের অভিযোগ, দিন কয়েক আগে যাঁরা দৈনিক দশ টাকা করে দিতে রাজি হননি তাদের অটো থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি হাঁসখালি ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এরপর মঙ্গলবার তাঁরা অটো না চালিয়ে ব্লক অফিসে এসে বিক্ষোভ দেখান। এর ফলে রাস্তায় অটো না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।হাঁসখালির বিডিও সায়ন্তন ভট্টাচার্য বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করা হবে।”
হাঁসখালি-বাদকুল্লা অটো মালিক সমিতির সম্পাদক রাম ঘোষ বলেন, “মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করি। কেন ওদেরকে টাকা দিতে হবে। আমরা তো ওদের সংগঠনের সদস্য নই। তাহলে কেন এই টাকা?” তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাদকুল্লার বাসিন্দা আইএনটিটিইউসি-র নেতা সুবীর বিশ্বাসের লোকজন জোর করে টাকা আদায় করতে চাইছে।”
অটো চালকদের অভিযোগ স্বীকার করে ‘বাদকুল্লা ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পরিচালন সমিতির সদস্য রাজু দে বলেন, “কেন টাকা নেব না? সব রুটের মূল কেন্দ্র বাদকুল্লা স্টেশন। ওরা আমাদের এলাকায় এসে আয় করবে অথচ আমাদের কিছু দেবে না তা হয় না।’’
তবে বাদকুল্লা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা হাঁসখলি-১ সাংগঠনিক ব্লকের আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি সুবীর বিশ্বাসের দাবি, “আটো চালকদের কাছ থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। যারা এটা করছে তাদের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই। ড্রাইভারদের সংগঠনও আমাদের সংগঠনের অনুমোদিত নয়। তবে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy