Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

সমবায় কর্তা ঋণখেলাপি, বলল রিপোর্ট

খোদ কর্তার বিরুদ্ধেই ঋণ খেলাপের অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে দু’দফায় তদন্তও হয়। তদন্তের রিপোর্টে দু’বারই উঠে আসে অভিযোগের সত্যতা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

খোদ কর্তার বিরুদ্ধেই ঋণ খেলাপের অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে দু’দফায় তদন্তও হয়। তদন্তের রিপোর্টে দু’বারই উঠে আসে অভিযোগের সত্যতা। তা বাদেও, ওই কর্তার আমলে উপযুক্ত নথিপত্র ছাড়াই বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছিল এবং সমবায় আইন লঙ্ঘন করে পরপর তিন বার তিনি সমিতির চেয়ারম্যান হয়েছিলেনও বলে উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।

কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান রামপ্রসাদ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই ঋণখেলাপ ও নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ উঠছিল। ২০১৬ সালের শেষ দিকে সমবায় দফতরের নদিয়া জেলার সহকারী নিবন্ধক তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করে দেন। সেই কমিটির সদস্যেরা চার বার ওই সমিতিতে যান তদন্তের কাজে। শেষমেশ ২০১৭ সালের মাঝামাঝি নাগাদ তাঁরা রিপোর্ট পেশ করেন।

রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন লোকজনকে ঋণ দেওয়া এবং ঋণ পরিশোধে গাফিলতি নিয়ে অভিযোগের তদন্ত করতে এই কমিটি গড়া হয়েছিল। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই সমবায় সমিতি একটি ট্রাস্টকে এক লপ্তে দু’কোটি টাকা ঋণ দেয়। এ ছাড়াও এক জনকে দেওয়া হয় ৬০ লক্ষ টাকা ঋণ।

নদিয়া জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক হওয়া সত্ত্বেও কাউকে এত টাকা ঋণ দিতে সাহস পান না। আর একটা সামান্য সমবায় সমিতি কী ভাবে এত টাকা ঋণ দিল, সেটাই আশ্চর্যের। এর পিছনে কারও কায়েমি স্বার্থ থাকা অস্বাভাবিক নয়।

রিপোর্টে এ-ও উল্লেখ রয়েছে যে, ওই বিপুল পরিমাণ ঋণের আদায় সন্তোষজনক নয়। দু’দফায় রামপ্রসাদ ২ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা ঋণ নেন ওই সমিতি থেকে। কিন্তু ঋণ নেওয়ার বেশ কয়েক মাস পর তদন্তকারীরা সমিতিতে গিয়ে দেখেন, তিনি ঋণের কোনও কিস্তিই শোধ করেননি। তাই রিপোর্টে তাঁকে পরিষ্কার ‘ঋণখেলাপি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টের কপি পাঠানো হয় জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কেও।

এর পরে রামপ্রসাদ ওই সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে গিয়েছেন। কারণ, রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছিল যে, পরপর তিন বার চেয়ারম্যানের পদে থাকা আইন-বিরুদ্ধ। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের সম্পাদক পদ থেকেও রামপ্রসাদকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তাতে না দমে দফতরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে রাজ্য সমবায় দফতরের নিবন্ধক পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন।

দিন কয়েক আগে সেই তদন্তের রিপোর্টও জমা পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সেই রিপোর্টেই রামপ্রসাদবাবুকে ‘ঋণখেলাপি’ বলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতার কথাই উল্লেখ রয়েছে পরের রিপোর্টেও। রামপ্রসাদ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতেই আমি পরপর তিন বার চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। তখন তো তাঁরা বলেননি যে এটা নিয়মবিরুদ্ধ! আর আমি ঋণখেলাপি কি না তা ঠিক করবে সমিতি। এ ক্ষেত্রে অন্য সংস্থা কিছু বলতে পারে না। আর উপযুক্ত সিকিউরিটির ভিত্তিতেই বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে অন্যায়ের কিছু নেই।’’

জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘রামপ্রসাদ দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা শোধ না করার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। তাই তাঁকে বিভিন্ন পদ থেকে সরতে হয়েছে। চেয়ারম্যান হয়ে সমবায় সমিতিকে তিনি এ ভাবে ডোবাতে পারেন, ভাবা যায় না!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy