Advertisement
E-Paper

কেউ আহত শুনলেই ছুটে যান আকবর

বেলডাঙার ভাবতা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটা ছোট হোটেল চালান আকবর।

আকবর। নিজস্ব চিত্র

আকবর। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ০২:০৫
Share
Save

করোনা নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক এতটাই ছড়িয়েছে যে রাস্তায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও অধিকাংশ মানুষই সেদিকে ফিরেও তাকান না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তো দূর অস্ত। এই যখন অবস্থা তখন তিনি মূর্তিমান ব্যতিক্রম। জাতীয় সড়কের ধারে সস্তার হোটেল চালান। সেই কাজ সামলেই কোথাও কেউ অসুস্থ কিংবা পথদুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শুনলে ছুটে যান বেলডাঙার ভাবতার যুবক আকবর আলি। কয়েক বছর ধরে এভাবে দুর্গতর পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি।

বেলডাঙার ভাবতা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে একটা ছোট হোটেল চালান আকবর। সারাদিনে রোজগার আহামরি কিছু নয়। তবে অন্যের বিপদে বরাবর পাশে দাঁড়াতে ভালবাসেন আকবর। সেই জন্য জাতীয় সড়কে কোনও গাড়ি, মোটরবাইক বা সাইকেল আরোহী দুর্ঘটনায় পড়েছেন বলে খবর পেলে সব কাজ ফেলে তিনি ছুটে যান সেখানে। আহতকে স্থানীয় হাসপাতাল প্রয়োজনে আরও দূরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে যাবতীয় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি। আহত ব্যক্তি যদি দুঃস্থ হন তবে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় খরচ নিজের কাঁধেই তুলে নেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়েই দেখা গিয়েছে, পুলিশি ঝামেলার ভয়ে ইচ্ছে থাকলেও আহতকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহস করেন না অনেকে। আকবর অবশ্য অন্য মানুষ। আহত ব্যক্তির পরিবারের লোকজনের অপেক্ষায় না থেকে হাসপাতালে সইসাবুদ, প্রয়োজনে পুলিশকে জানানোর কাজটাও তিনি নিজেই করেন।

মাস চারেক আগের ঘটনা। সাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ১০ বছরের ছেলেকে সাইকেলে বসিয়ে বেলডাঙা থেকে ভাবতার বাড়িতে ফিরছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পিকআপ ভ্যান তাঁদের ধাক্কা দিলে গুরুতর জখম হন চাঁপাপাড়ার বাসিন্দা সাইদুল। গাড়িটি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আকবর ঘটনাস্থলে যান। ওই জায়গা দিয়ে যাওয়া একটি ছোট ম্যাটাডরে আহত দু’জনকে প্রথমে বেলডাঙা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখানে গিয়ে আহতদের এক্সরে করানো, সিটি স্ক্যান-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো—সবই আকবর করেন। সাইদুলের ছেলে সাকিবুল সোমবার বলেন, “আকবরদা না থাকলে যে কী হত, ভেবেই কুল পাচ্ছি না। সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে ভাই আর বাবা সুস্থ হয়েছে।’’ এর দিনকয়েক আগে রাজু মণ্ডল নামে এক মোটরবাইক আরোহী দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন। তাঁকেও সময়ে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন আকবর। কাজিসাহা গ্রামের কালু শেখ মোটরবাইক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাঁর যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলেন আকবরই। কালু এদিন বলেন, ‘‘আকবর ভাই না থাকলে আমি প্রাণে বাঁচতাম না।’’

যদিও এ নিয়ে প্রথমে কিছু বলতেই চাইলেন না আকবর। পরে লাজুক স্বরে বললেন, “আমার হোটেলটা ছোট হলেও সংসারটা চলে যায়। রাস্তার ধারে হোটেল হওয়ায় কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত কানে আসে। অনেকেই ভয়ে এগিয়ে যায় না। ফলে রাস্তায় পড়ে থেকে মারা যান আহত। কিন্তু দেখা গিয়েছে, সময়মতো আহতকে হাসপাতালে পাঠানো গেলে হয় তো তিনি বেঁচে যেতেন। সে কথা ভেবেই এগিয়ে যাই।’’ স্বামীর এমন কর্মকাণ্ডে গর্বিত আকবরের স্ত্রী তাহামিনাও। বলেন, “দিনেরবেলাই শুধু নয়, রাত-বিরেতে কারও কিছু হলেও ছোটেন হাসপাতাল। পাঁচ বছর ধরে এটাই দেখে আসছি। করোনা পরিস্থিতিতে শুধু মাস্ক পরার কথাটা ওকে সব সময় মনে করিয়ে দিই।’’ বেলডাঙা-১ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সোলেমান মণ্ডল বলেন, “দুর্ঘটনার সময় যে কোনও লোকেরই সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এই সময় কেউ পাশে দাঁড়ালে দুর্ঘটনাগ্রস্ত দ্রুত চিকিৎসা পান। যেটা তাঁর পক্ষে খুব জরুরি। কেউ এই কাজে এগিয়ে এলে তাঁকে বাকিদেরও সাহায্য করা উচিত।’’

Beldanga Coronavirus in West Bengal

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।