এসিতে তখনও আগুন। নিজস্ব চিত্র।
অগ্নিফাঁড়া কিছুতেই কাটছে না শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না রোগী, চিকিৎসক এবং হাসপাতালের অসংখ্য অচিকিৎসক কর্মীদের। বার-বার এত অগ্নিকাণ্ড কেন সেই প্রশ্নও উঠছে।
সোমবার সকাল পৌনে ন’টা নাগাদ সিটি স্ক্যান মেশিনের ঘরে এসি যন্ত্রে আগুন ধরে যায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নিরাপত্তারক্ষীরা কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরে খবর পেয়ে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন এসে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে দেয়। প্রাথমিক ভাবে দমকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শর্টসার্কিট হয়েই আগুন লেগে যায়। দমকলের সাব-অফিসার বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, “এসি মেশিন অনেক পুরনো। সম্ভবত সেই কারণেই শর্ট সার্কিট হয়েছে।”
এই প্রথম নয়, বছর চারেক আগে ঠিক একই ভাবে পুরনো এসি মেশিন থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন লেগেছিল হাসপাতালে। সে বারও বড়সড় অগ্নিকান্ডের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন নিরাপত্তারক্ষীরাই। নিরাপত্তারক্ষী মুকুল বাগচী, হারান শেখ-রা বলছেন, “টেলিফোন বুথ থেকে চিৎকার শুনে সিটি স্ক্যান মেশিনের ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখি, দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছে। আগুন নেভানোর সিলিন্ডার নিয়ে তাড়াতাড়ি সেখানে চলে যাই।” তাঁরা আরও জানান, সিটি স্ক্যান মেশিনের ঘরে লোহার গ্রিল দেওয়া। বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন কয়েক জন কর্মী। চিৎকারে তাঁরা উঠে পড়েন। কিন্তু গ্রিলের তালার চাবি ছিল ঘরের ভিতরে। ঘরের ভিতরে তখন আগুন জ্বলছে। সেই অবস্থায় এক জন নিরাপত্তাকর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে কোনও মতে চাবি নিয়ে তালা খুলে দেন। তার পরই সবাই মিলে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন।
আবার কোনও ভাবে বিপদ এড়ানো গেলেও প্রশ্ন উঠছে, বার-বার কেন সিটি স্ক্যান মেশিনের ঘরের পুরনো এসি থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটবে? কেন এসি রক্ষণাবেক্ষণে এত অবহেলা? কেনই বা পুরনো এসি ব্যবহার হচ্ছিল?
অগ্নি-জিজ্ঞাসা
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চার বছরে এই নিয়ে তিন বার এসি থেকে আগুন লাগল। কেন?
কেন অগ্নি-নিরাপত্তা বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি চালায় না পূর্ত দফতর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ?
কেন কাজ করল না স্মোক ডিটেকটর?
কেন বাজল না ফায়ার অ্যালার্ম?
কেন এত দিনেও স্প্রিঙ্কলার লাগানো হল না?
হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার দাবি করেন, “একটি বেসরকারি সংস্থার উপরে এসি রক্ষণাবেক্ষের দায়িত্ব ছিল। ওরা দুটো নতুন এসি বসিয়েছে। আমাদের জানানো হয়েছিল যে, পুরনো মেশিন আর চালানো হয় না। এর জন্য ওই সংস্থাকে শো-কজ করা হয়েছে।”
তবে ওই সংস্থার শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল ইউনিটের ম্যানেজার মৃণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই ঘরে গু’টি নতুন এসি লাগানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া আমরা পুরনোটি চালাই না। আজ সকালে সামান্য সময় চালানো হয়েছিল। তাতেই বিপত্তি ঘটে।” যদিও সংস্থার কর্মীদের একটা অংশের দাবি, তিনটি এসি-ই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চালানো হয়। বিশেষ করে সকালের দিকে পুরনো বড় এসি চালিয়ে দ্রুত ঘর ঠাণ্ডা করে তার পর সিটি স্ক্যান মেশিন চালানো হয়। শুক্রবারও সেই একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রায় মিনিট কুড়ি পুরনো এসি চলার পর আগুন লেগে যায়।
পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র দেবপ্রসাদ সামন্তের বক্তব্য, “ওই এসি আমরা বসাইনি। তাই ওর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব ছিল না।” তা হলে দায়িত্ব কার, এই প্রশ্নের সদুত্তর কেউ দিতে পারেননি। আগুনের খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন জেলাশাসক বিভু গোয়েল। তিনি বলেন, “হাসপাতালের বিদ্যুৎ পরিষেবা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে হবে। শনিবার থেকেই সেটা শুরু হবে।” সেই মতো শুক্রবারই সংশ্লিষ্ট দফতরগুলিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy