আধখোলা দরজা দিয়ে বাইরে নজর। কালীনগরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
ছ’বছর আগের ঘটনা ফের যেন উঠে এসেছে সামনে। আবার সন্ত্রস্ত বেলডাঙা। জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে জেলার ৯ জনকে এনআইএ গ্রেফতারের পর থেকেই বেলডাঙার আনাচেকানাচে খাগড়াগড় কাণ্ডের কথা ভাসছে। সেই প্রসঙ্গেই উঠে আসছে শহরের নিরাপত্তার কথা। অলিতে গলিতে শোনা যাচ্ছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা এবং এলাকার অনেকেরই মুখ চেনা। তারাই গোপনে ভয়ঙ্কর কণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। ঠিক একই ভাবে, মুখ চেনা বলেই বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছিল খাগড়াগড় কাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযুক্তদের। তাই এই মুখ চেনা লোকের মুখোশের আড়ালে সত্যি কার মুখ রয়েছে, তা না জেনে আবার পা ফেললে বড় বিপদে পড়তে হবে বলে মনে করছেন বেলডাঙার মানুষ। তাঁরা আবার দাবি তুলেছেন, পুরসভা উদ্যোগী হোক, বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ পরিচয়পত্র ছাড়া চলবে না।
খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ হলেও তার ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল বেলডাঙার বিভিন্ন প্রান্তে। নাশকতার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন নথি, মোবাইল ফোন,নকসা, ও সরঞ্জাম উদ্ধার হয় বেলডাঙায়। কিন্তু নাশকতার কারবারিরা বেলডাঙার ভূমি কী ভাবে ব্যবহার করলো। গোয়ান্দারা তদন্তে নেমে জানতে পারে নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রেখে শুধু মাত্র মুখ চেনা হিসাবেই বেলডাঙার নানা বাড়ি ভাড়া পায় তারা। এনআইএ ২০১৪ সালের অক্টোবরে বেলডাঙায় টানা ১১ দিন তদন্ত প্রক্রিয়া চালিয়েছিল। তারা সেই সময় বারবার প্রশ্ন তোলে কেন কোনও পরিচয়পত্র জমা না রেখে বাড়ি ভাড়া পেল। প্রশ্ন উঠলেও তার উত্তর মেলেনি। সেই সময় বেলডাঙার নানা প্রান্ত থেকে দাবি ওঠে, কেন পরিচয় না রেখে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হল। এর বিহিত করতে বেলডাঙা পুর প্রশাসন এই নিয়ে নানা আলোচনা শুরু করে। পরিচয় পত্র না জমা দিলে পুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে না। কিন্তু ওই পর্যন্তই, ছয় বছর কেটে গেলেও সেই নিয়ে এগোতে পারেনি পুরসভা। কিন্তু সাম্প্রতিক জেলায় এনআইএর গতিবিধি সেই প্রসঙ্গ কে প্রাসঙ্গিক করেছে।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বাসিন্দা মহম্মদ হাসান চৌধুরীর বাড়ির দোতলায় এক বিস্ফোরণের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল রাজ্য। পেছনে ছিল এক জঙ্গিচক্র। বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার ঠিক মাস চারেক আগে শাকিল স্থায়ী ভাবে বাস করতো মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। অপরাধীরা কিভাবে বেলডাঙায় এল এবং বাড়ি ভাড়া পেল তার খোঁজে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর থেকে বেলডাঙার বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ে তল্লাশি চালায় এনআইএ-এর গোয়েন্দাররা। তখন বেলডাঙার সাধারণ মানুষ ভেবেছিল বেলডাঙা পুরসভা নিশ্চয় নিয়ম চালু করবে যাতে কেউ সচিত্র সরকারি পরিচয় পত্র ছাড়া বেলডাঙা পুর এলাকায় বাড়ি ভাড়া না পায়। কিন্তু তা হয় নি। এতে শহরবাসী কি সুরক্ষিত?
বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যপারে বেলডাঙার বাড়ি মালিকরা কতটা সচেতন হয়েছে। বেলডাঙা বড়ুয়ার কাছে অপরিচিত এক ব্যক্তিকে নিয়ে বাড়ি ভাড়া খুঁজতে বেড়িয়ে দেখা গেল কিছুই বদলায়নি। মঙ্গলবার বেলডাঙার হাট বার। ফলে রাস্তায় ভিড়। রাস্তার একটা চায়ের দোকানের মালিকের কাছে ফাঁকা বাড়ির খোঁজ পেয়ে একটি দোতলা বাড়ির সামনে উপস্থিত হওয়া গেল। অনেক ডাকাডাকির পর উত্তর মিলল ‘দাঁড়ান যাচ্ছি।’ দেতলা থেকে নেমে এসে এক মধ্যবয়স্ক মহিলা জানলা থেকে জানালেন, বাড়ি আছে। কে থাকবে? ছাত্র না পরিবার? ব্যবসা না চাকরি? পরিবারে কে কে আছে? বাড়িতে পুরুষ সদস্য রাতে বাড়িতে থাকে না বাড়ির বাইরে থাকে? দুটো ঘর আছে। সব কিছু ঠিক ঠাক হলে ৩৫০০ টাকা ভাড়া লাগবে। প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে। এত কথা হল, কিন্তু এক বারের জন্যও সচিত্র পরিচয়পত্রের কথা বলা হল না।
এই প্রসঙ্গে বেলডাঙার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সমন্বয়কারী কিশোর ভাস্কর বলেন, “২০১৪ সালের ঘটনার পর বেলডাঙায় বাড়ি ভাড়া পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র রাখা খুব প্রয়োজন। মানুষ দিনের পর দিন সেই দাবি জানিয়েও আসছে। কিন্তু পুরসভায় এই নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।” ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সমন্বয়কারী মোহন ছাজের বলেন, “পরিচয় পত্র নিয়ে একটুও এগোতে পারেনি পুরসভা।” বেলডাঙা কেন্দ্রীয় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক শঙ্কর চৌধুরী বলেন, “নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা নয়। ছবি যুক্ত পরিচয়পত্র জমা রেখেই ভাড়া দেওয়া বা নেওয়া উচিত।” পুরসভার প্রশাসক ভরত ঝাওর বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মানুষ সব ক্ষেত্রে পুরসভাকে জানাচ্ছে না। আগামী দিনে এই নিয়ে আমরা আরও কড়া সিদ্ধান্ত নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy