Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Abhishek Banerjee

সাগরদিঘির পরেও টনক নড়েনি! গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চার কাঁটায় বিদ্ধ মুর্শিদাবাদে শুক্রে অভিষেকের যাত্রা

সাগরদিঘি উপনির্বাচনের বিপর্যয়ের পর প্রথম বার জেলায় পা রাখতে চলেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার আগে জেলায় গোষ্ঠীকোন্দলের কাঁটায় বিদ্ধ শাসক তৃণমূল।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২৩ ১৭:৫০
Share: Save:

মালদহ ঘুরে শুক্রবারই মুর্শিদাবাদে ঢোকার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনসংযোগ যাত্রা’র। সাগরদিঘি উপনির্বাচনের বিপর্যয়ের পর প্রথম বার জেলায় পা রাখতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তার আগে জেলায় গোষ্ঠীকোন্দলের কাঁটায় বিদ্ধ শাসক তৃণমূল।

সাগরদিঘির ভোটের সময় থেকেই তৃণমূলের অন্দরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছিল। সেই সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান কানাই মণ্ডল এবং দলের দুই বিধায়ক আমিরুল ইসলাম ও আখারুজ্জামান। সব ক্ষমতা নিজের হাতে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল কানাইয়ের বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, দুই বিধায়কের বিরুদ্ধে ‘অন্তর্ঘাতের’ অভিযোগ তুলেছিলেন কানাই। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, দলের অন্দরের সেই ফাটল আরও চওড়া হয়েছে। সম্প্রতি দলের জেলা কমিটি ঘোষণার সময় জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বহরমপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা সাংসদ আবু তাহের খান। তাঁর অভিযোগ ছিল, জেলা সভানেত্রী নিজের পছন্দের লোকেদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেছেন।

অন্য দিকে, জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি খলিলুর রহমানকে ‘বিরোধীদের দালাল’ বলে প্রকাশ্যে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে দলেরই বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসকে। শুধু তা-ই নয়, জেলা সভানেত্রীর ঘোষণা করা অঞ্চল কমিটি খারিজ করে নিজের তৈরি তালিকা প্রকাশ করেছিলেন জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুল রাজ্জাক। যদিও শাওনি সেই কমিটি পরে খারিজ করে দেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই আবহেই জেলায় আসছেন অভিষেক।

জেলায় দলীয় নেতৃত্বের একাংশের মত, অভিষেকের যাত্রা সর্বস্তরে ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সাড়া ফেলেছে। রাজ্যের যেখানে যেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা রয়েছে, সেখানেই কড়া বার্তা দিয়েছেন অভিষেক। জানিয়ে দিয়েছেন, মানুষের যাঁকে পছন্দ, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করা হবে তাঁকেই। একই বার্তা অভিষেক মুর্শিদাবাদে এসে দিলে এখানেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কাটানো সম্ভব হবে। খলিলুর বলেন, ‘‘এত বড় দল। ছোটখাটো বিরোধ থাকবেই। আমি আশাবাদী, বিরোধ সামলে একসঙ্গে চলার দিশা দেখাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’ অভিষেকের সফর নিয়ে উচ্ছ্বসিত শাওনি। তিনি বলেন, ‘‘চার দিনের জন্য জেলায় থাকবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভেবে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। দল তো সংঘবদ্ধ হবেই।’’

তবে অন্য একটি অংশের দাবি, অভিষেক বার্তা দিলেও জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে তিমিরে আছে, সেই তিমিরেই থেকে যাবে। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘এখানে অনেক নেতা আছেন, যাঁরা নিজের আখের গোছাতেই ব্যস্ত। দল নিয়ে এঁরা ভাবিত নন। সাগরদিঘির ফলাফলের পর জেলা নেতৃত্বের উচিত ছিল, একজোট হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া। তা তো হলই না। উল্টে সকলেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। যার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরাও বিশ্বাস হারাচ্ছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে আরও কড়া হতে হবে।’’ জেলার নেতারা নিজেদের ‘আচরণ’ পরিবর্তন না করলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি জলঙ্গির বিধায়ক রাজ্জাকের। তিনি বলেন, ‘‘অভিষেক আমাদের নয়নের মণি। উনি আসবেন, এটা খুবই ভাল কথা। কিন্তু জেলার নেতাদের আচরণের পরিবর্তন না হলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটবে না।’’

জনসংযোগ যাত্রায় ৫ থেকে ৮ মে চার দিনের জন্য মুর্শিদাবাদে থাকবেন অভিষেক। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবারই ফরাক্কা দিয়ে ঢুকবেন জেলায়। তবে তাঁর চূড়ান্ত সফরসূচি জেলা নেতৃত্বের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। দলীয় সূত্রে খবর, জেলায় অভিষেক কোনও সভা করবেন না। তার পরিবর্তে রোড শো করবেন। ফরাক্কা থেকে সফর শুরু করে অভিষেকের যাওয়ার কথা শমসেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুর, রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা হয়ে ভগবানগোলায়। পরের দিন জলঙ্গি, রানিনগর হয়ে নওদা। ৮ মে সাগরদিঘি যাওয়ার কথা অভিষেকের। তার পর থেকে সেখান খেকে তিনি যাবেন বীরভূমে।

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy