পড়ে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নিজস্ব চিত্র।
পূর্ব ভারতে থাকা বস্ত্র মন্ত্রকের একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এখন পোড়ো বাড়ি। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। একে একে বন্ধ হয়েছে সব প্রকল্প। এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছে তৃণমূল। রাজ্যের অসহযোগিতার জন্য প্রকল্প বন্ধ হয়েছে বলে পাল্টা সুর চড়িয়েছে বিজেপি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০০ সাল নাগাদ নদিয়া জেলাকে ‘টেক্সটাইল জ়োন’ ঘোষণা করে বস্ত্র বয়ন মন্ত্রক। ২০০৩ সালে জেলার তন্তুজীবীদের সুবিধার্থে কলকাতার সিজিও কমপ্লেক্সে প্রধান দফতরের পাশাপাশি রানাঘাটের মিল পাড়াতে ‘টেক্সটাইল সার্ভিসিং ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব ভারতে যন্ত্রচালিত তাঁত শিল্পের একমাত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এটি। আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি ভিন্ রাজ্য থেকেও ছেলেমেয়েরা এখানে বুনন শিল্পের প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হত। ২০১৪ সালের পর থেকে একে একে বন্ধ হয়ে যায় সব প্রকল্প। দফতরে মোট আট জনের পদ থাকলেও, একে একে অবসর নেওয়ার পর তিন জন কর্মী বর্তমানে রয়েছেন। নতুন করে শূন্য পদেও নিয়োগ হয়নি।
জানা গিয়েছে, আগে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে যন্ত্রচালিত তাঁত মেশিন মেরামতির কারিগরি শিক্ষা ও বিভিন্ন বুননের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ২০১০-১২ সাল নাগাদ দফতরকে প্রতি তিন মাস অন্তর বিদ্যুৎ বিল হিসেবে গুনতে হত প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। অথচ সেই বিলের পরিমাণ এখন কমে হয়েছে মাত্র দশ হাজার টাকা। দফতরের কর্মীরা জানান, প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য আসেন না কেউই। কয়েক কোটি টাকার যন্ত্র বিকল যাতে না হয়, সে জন্য নিজেরা মাঝেমধ্যে তা সচল রাখেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বছর দশেক আগেও এলাকাটি বেশ সরগরম ছিল। এখন নিয়ম করে দফতরের তালা খোলা হয় ঠিকই তবে মেশিন আর চলে না। দফতরের সীমানার মধ্যেই দিনের বেলাতেও চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। দফতরের আধিকারিক এস এস রাও অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন, যেমন নির্দেশিকা দেয় আমরা সেই মতো কাজ করি।’’
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে তৃণমূলের সারা বাংলা তাঁত শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি সনদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে তন্তুজীবী মানুষ যে সকল সুযোগ সুবিধা পেয়ে এসেছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে একে একে তা বন্ধ হয়েছে। শিল্পীদের জীবনে সঙ্কট নেমে আসার জন্য কেন্দ্রের উদাসীনতাই দায়ী।’’ জবাবে রানাঘাটের সাংসদ বিজেপির জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের যে সহযোগিতা দরকার, তা না মেলার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
দুই সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি পেরিয়ে কবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আগের অবস্থায় ফিরবে— সেই আশাতেই দিন গুনছেন স্থানীয়েরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy