Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Lalgola

আবেদন সার, আজও পাকা বাড়ি মেলেনি গৌতমদের

লালগোলা জেলা সদর বহরমপুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জনপদ। সেই লালগোলা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরের গ্রাম লস্করপুর।

home.

ভাঙা বাড়িতেই বাস। —নিজস্ব চিত্র।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
লালগোলা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

অন্যের সংসার সাজাতে দিনভর মাটির পাত্র তৈরির ‘চাকা’ ঘুরিয়ে চলেছেন তাঁরা। ৩০ বছর ধরে সেই চাকা ঘুরিয়ে চললেও নিজের সংসার সাজাতে পারলেন না লালগোলার দেওয়ানসরাই পঞ্চায়েতের লস্করপুরের গৌতম পাল। অন্যরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিলেও পূর্বপুরুষের এই পেশা ছাড়তে পারেননি তিনি। মাটির কলসি, ঘড়া, হাঁড়ি, ঝাঁঝর, খোলা তৈরি করে যা আয় হয়, তাতে টেনেটুনে সংসার চলে। দুই ছেলে-মেয়েকে পড়াতে গিয়েই সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। নিজের আয়ে মাথার উপর ছাদটাও তৈরি করতে পারেননি। সরকারি আবাস প্রকল্পেও তাঁর নাম আসেনি। টালির ছাউনি, টিনের বেড়া দেওয়া এক কামরার ঘর ও বারান্দায় তাঁদের দিন কাটে।

গৌতম বলছেন, ‘‘যাঁদের মাথার উপরে ছাদ আছে তাঁরা দু’-তিন বার করে সরকারি আবাস প্রকল্পে বাড়ি পেলেন। কিন্তু আমরা দুই ভাই পেলাম না। প্রার্থীরা ভোট চাইতে এলে জানতে চাই, কেন বাড়ি পেলাম না। তাঁরা বললেন, আমাদের নাকি বাড়ি পাওয়ার তালিকায় নাম নেই।’’ গৌতমের স্ত্রী প্রমীলার আক্ষেপ, ‘‘আমাদের চাষের জমি নেই। সরকারের কাছ থেকে সামান্য পাট্টা জমি পেয়েছিলাম। তাতে কোনওরকমে টালির ছাউনি দিয়ে মাথা গুঁজে থাকছি। সরকারি প্রকল্পের লক্ষ্মীর ভান্ডার এবং বিনা পয়সায় রেশনে চাল ছাড়া কিছুই জোটেনি।’’

লালগোলা জেলা সদর বহরমপুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জনপদ। সেই লালগোলা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরের গ্রাম লস্করপুর। সেখানে প্রায় বারোশো মানুষের বসবাস। মূলত গরিব, প্রান্তিক লোকজনের বসবাস। সরকারি নানা প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে পৌঁছেছে। কোথাও পিচের, কোথাও ঢালাই রাস্তা হয়েছে। লক্ষ্ণীর ভান্ডার, নানা ভাতা প্রকল্প, সবুজসাথী, কন্যাশ্রীর সুবিধা মিলেছে। গ্রামে উঠেছে পাকা দালান বাড়িও। তবে অনেক না পাওয়াও আছে। লস্করপুর গ্রামের পিচের রাস্তা থেকে দু’হাত এগোলেই প্রয়াত তামিজুদ্দিন শেখের বাড়ি। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে। তাঁদের সম্বল এক ফালি জমিতে টালির চালা দেওয়া বারান্দা-সহ একটিমাত্র ঘর। তামিজুদ্দিনের স্ত্রী সাবেরা বেওয়া বলেন, ‘‘একাধিক বার আবেদন করেও সরকারি আবাস, বিধবা ভাতা মেলেনি। তবে লক্ষ্মীর ভান্ডারে প্রতি মাসে ৫০০ করে টাকা পাই,, বিনা পয়সায় রেশন এবং স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়েছি। বাড়িতে শৌচালয় নেই।’’ পলাশবাটি গ্রামের বৃদ্ধা হাজরা বেওয়া, রাশেদা বেওয়ারা জানান, তাঁদের স্বামীরা মারা গিয়েছে অনেকদিন আগে। এখনও কপালে জোটেনি বিধবা বা বার্ধক্য ভাতার টাকা। রাশেদা বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। একাধিকবার আবেদন করেও ভাতা পাইনি। সরকারি বাড়ি প্রকল্পে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকা চিকিৎসার কাজে লেগেছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। কিন্তু তাতে তো সব চিকিৎসা বিনা পয়সায় হয় না।’’

দেওয়ানসরাই গ্রাম পঞ্চায়েত গত বছর অগস্ট মাস পর্যন্ত তৃণমূলের দখলে ছিল। পরে অনাস্থায় তৃণমূলের প্রধানকে সরতে হয়। বাম-কংগ্রেসের সন্ধ্যারানি দাস বর্তমানে প্রধান। সন্ধ্যারানি বলছেন, ‘‘আমি বছরখানেক আগে প্রধান হয়েছি। আবাস যোজনার তালিকা আমি দায়িত্বে আসার আগেই হয়েছে।’’ দেওয়ানসরাই অঞ্চল তৃণমূলের নেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে এখানে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা কেন্দ্রের প্রকল্প। ঘর না পাওয়ার দায় রাজ্য সরকার বা তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lalgola House WB Panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy