Advertisement
২১ অক্টোবর ২০২৪
Ranaghat Incident

প্রতিবাদের ‘শাস্তি’, নদিয়ায় অন্ধকার রাস্তায় হেডলাইট নিভিয়ে মহিলাকে পিষল গাড়ি, গ্রেফতার চালক

নদিয়ার তাহেরপুর থানা এলাকায় এক মহিলাকে পিষে দিয়ে চলে গেল মালবাহী গাড়ি। এই ঘটনায় ঘাতক গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে গাড়িটিকেও।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:১১
Share: Save:

প্রতিবাদের ‘শাস্তি’! নদিয়ার তাহেরপুর থানা এলাকায় এক মহিলাকে পিষে দিয়ে চলে গেল মালবাহী গাড়ি। রবিবার রাতের এই ঘটনায় ঘাতক গাড়ির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে গাড়িটিকেও।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী সুজন বিশ্বাস প্রতি দিনের মতোই দোকান বন্ধ করে স্ত্রীকে নিয়ে বাইক চালিয়ে রানাঘাট-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক ধরে কৃষ্ণনগরের দিক থেকে তাহেরপুরের দিকে আসছিলেন। রাস্তায় বাইক দাঁড় করানো নিয়ে ওই ওষুধের দোকানদারের সঙ্গে এক ইঞ্জিন ভ্যানচালকের বচসা হয়। দু’পক্ষই আরও কয়েক জনকে ফোন করে ডেকে আনে। পরে অবশ্য ঝামেলা মিটেও যায়। অভিযোগ, ইঞ্জিনভ্যানের চালক ফোন করে একটি পিকআপ ভ্যানকে ডেকে আনেন। বচসা থামার পরে সেই পিকআপ ভ্যান হঠাৎ গতি বাড়িয়ে ওষুধ ব্যবসায়ীর স্ত্রী তন্দ্রা বিশ্বাস (৩২)-কে পিষে দেয় বলে অভিযোগ।

গাড়ির তলায় পিষ্ট হন ওই মহিলা-সহ তিন জন। স্থানীয়েরা তাঁদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যান শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা তন্দ্রাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এক জন এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাস্থলেই পিকআপ ভ্যানটি ফেলে রেখে চম্পট দেন চালক।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাহেরপুর থানা এলাকার শ্যামনগর কামগাছি এলাকার বাসিন্দা সুজন। সুজনের ওষুধের দোকান রয়েছে কৃষ্ণনগরের কোতোয়ালি থানার জালালখালিতে। প্রতি দিনের মতো রবিবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাইকে সস্ত্রীক বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রাস্তা ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। খামার শিমুলিয়া এলাকা পার হওয়ার সময় তন্দ্রাদেবী বাইকে বসেই চশমা পরিষ্কার করছিলেন। হাত ফস্কে চশমাটি পড়ে যায়। বাইক থামিয়ে সেটি খুঁজছিলেন স্বামী-স্ত্রী। সেই সময় ওই রাস্তা ধরেই আসছিল একটি ইঞ্জিনভ্যান। রাস্তার উপর বাইকটি রাখা নিয়ে ভ্যানচালকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সামান্য কথা কাটাকাটি হয়। অভিযোগ, চালক তন্দ্রাদেবীকে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। প্রতিবাদ করেন সুজনবাবু। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।

এরই মধ্যে ইঞ্জিনভ্যানের চালক ফোন করেন কাউকে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় একটি পিকআপ ভ্যান। সেই গাড়ির চালকও নেমে এসে সুজনবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। দুই পক্ষের পরিচিতদের মধ্যে ফের শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পরে তা মিটেও যায়। রানাঘাটের দিকে রওনা দেয় পিকআপ ভ্যানটি। কৃষ্ণনগরের দিকে রওনা দেন দম্পতি। কিন্তু হঠাৎই গতি বাড়িয়ে দিক পরিবর্তন করে দম্পতির দিকে ছুটে আসে গাড়িটি। ভিড়ের মধ্যে ওই মহিলাকে লক্ষ্য করে দ্রুত গতিতে চালিয়ে দেওয়া হয় গাড়ি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতেই গাড়িচালকের বিরুদ্ধে পুলিশে ইচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃত মহিলার স্বামী। রানাঘাটের এসডিপিও শৈলজা দাস বলেন, “পিকআপ ভ্যানের চালকের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ যুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” সুজনের কথায়, “আমরা ভেবেছিলাম সমস্যা মিটে গিয়েছে। কয়েক মিনিট পরেই দেখা যায়, ফের ওই ভ্যানটি সামনের হেডলাইট নিভিয়ে কৃষ্ণনগরের দিকে দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে। সেই সময় বেশ কয়েক জন স্থানীয় মানুষও ছিলেন ঘটনাস্থলে। কয়েকটি বাইক রাখা ছিল। গাড়িটি ভিড় লক্ষ্য করে এগিয়ে আসে। আমার স্ত্রী-সহ আরও দু’জনকে ধাক্কা মারে। রাস্তায় সবাই ছিটকে পড়েন। স্ত্রীকে পিষে দেয় গাড়িটি। পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Ranaghat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE