—ফাইল চিত্র।
কেউ ভোর থেকে, কেউ আবার আগের দিন রাত জেগে লম্বা লাইনে অপেক্ষা করেন। কিন্তু কিছুতেই মেলে না রেলের তৎকাল টিকিট। অনলাইনে তো নয়ই। অধিকাংশ সময়ে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই শেষ হয়ে যায় টিকিট। অথচ দালালের কাছে কড়ি ফেললে সেই টিকিটই মেলে অনায়াসে। মুর্শিদাবাদে সেই রকমই এক ‘দালাল’-এর হদিস মিলল। দ্বিগুণ দাম দিলেই যিনি কিনা তৎকাল টিকিটের নিশ্চয়তা দিচ্ছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। হরিহরপা়ড়ার রাসেল রানা নামে সেই যুবককে গ্রেফতার করল রেল পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ‘রেড চিলি’ নামে একটি কম্পিউটার সফ্টঅয়্যার। রেল সূত্রে খবর, এই সফ্টঅয়্যার দিয়ে রেলের টিকিট বিক্রিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন রাসেল। ধৃতকে রবিবার আদালতের হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
তৎকাল টিকিটে কালোবাজারির বহু অভিযোগ ওঠায় অনেক দিন ধরেই তদন্ত করছে রেলের অপরাধদমন শাখা। অতীতে ‘রেড মির্চি’ নামে একটি হ্যাকিং সফটওয়্যারের নামও জানতে পেরেছিলেন তদন্তকারীরা। রেল জানতে পারে, ‘রেড মির্চি’র সাহায্যে আগে থেকেই তৎকাল টিকিটের ফর্ম পূরণ করে রাখছেন ‘এজেন্ট’রা। যার জেরে টিকিট কাটার নির্দিষ্ট সময় চালু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বুক হয়ে যায় একাধিক তৎকাল টিকিট! তদন্তকারীদের অনুমান, ‘রেড চিলি’ সফ্টঅয়্যারটিও সেই ভাবেই কাজ করে।
পুলিশ সূত্রে খবর, হরিহরপাড়ার তক্তিপুর এলাকায় একটি সাইবার ক্যাফে চালাতেন রাসেল। রেল ও বিমানের টিকিট কাটার ব্যবসা ছিল তাঁর। সম্প্রতি এলাকার কয়েক জন ভিন্রাজ্যে কাজে যাওয়ার সময় তাঁর দোকান থেকে টিকিট কাটেন। রেলের টিকিট পরীক্ষক সেই টিকিট পরীক্ষা করতে গিয়ে বড়সড় জালিয়াতির আঁচ পান। তার পরেই তদন্ত শুরু হয়। ওই ঘটনার পরেও দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার সময় টিকিট পরীক্ষক ও রেল পুলিশ যাত্রীদের কাছ থেকে বেশ কিছু নকল টিকিট উদ্ধার করে। যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার তক্তিপুর কালীতলাপাড়ার রকি মণ্ডল নামে এক যুবক গ্রেফতার হন। তার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাসেলের খোঁজ পায় রেল পুলিশ। এর পরেই জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ অভিযান চালানো হয়। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সরিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘রেল পুলিশের একটি অভিযানে আমাদের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। স্থানীয় থানা সহযোগিতা করেছে।’’
রেল পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, রাসেলের এক কামরার দোকান থেকে কম্পিউটার, বেশ কিছু হার্ডডিস্ক, প্রচুর আধার কার্ড, কিছু ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, জাল টিকিট, ‘রেড চিলি’ সফ্টঅয়্যারটি উদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, নাম, ফোন নম্বর-সহ অন্যান্য তথ্য ওই সফটঅয়্যারে আগে থেকেই বসানো থাকত। যার ফলে তৎকাল টিকিট কাটার সময় এলে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে কয়েকশো টিকিট ‘কনফার্ম’ করতে পারতেন রাসেল। তদন্তকারীরা ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছেন, একাধিক ভুয়ো আধার কার্ড ব্যবহার করে বহু ‘ইউজার আইডি’ তৈরি করা ছিলই। একটি ইউজার আইডি থেকে মাসে সর্বাধিক ছ’টি টিকিট কাটার নিয়ম থাকলেও ওই যুবক ওই সফ্টঅয়্যারটির মাধ্যমে এক দিনে কয়েকশো টিকিট কেটে নিতেন। শুধু তাই নয়, ভুয়ো পিএনআর নম্বর তৈরি করে জাল টিকিটও বিক্রি করতেন যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy