বহরমপুরে তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নিচ্ছেন কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থী সৌমেন সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
কংগ্রেসের জয়ী পঞ্চায়েত প্রার্থীকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল!— এমনই অভিযোগে উত্তাল হয়েছিল মুর্শিদাবাদের বহরমপুর। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ‘এপিসোড অপহরণ’-এ যবনিকা পড়ল। দেখা গেল যে প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে, সেই প্রার্থী নিজেই গিয়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনার সূত্রপাত। মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছিলেন, মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী সৌমেন সরকারকে অপহরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রথমে থানায় অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। পরে অপহৃত কংগ্রেস প্রার্থীকে উদ্ধার এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখায় জেলার প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। কিন্তু এর কয়েক ঘণ্টা পরেই নাটকীয় মোড় নেয় গোটা পরিস্থিতি। অপহরণের অভিযোগের ২৪ ঘণ্টা পেরোনোর আগেই দেখা মেলে সৌমেনের। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁর খোঁজ মেলে বহরমপুরেরই তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে। সেখানেই তিনি দল বদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। একই সঙ্গে তাঁর অপহরণের তত্ত্ব খারিজ করে বলেন, অপহরণ নয়, মতাদর্শের পরিবর্তন হয়েছে তাঁর। তাই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।
শুক্রবারের এই ঘটনায় হতচকিত মুর্শিদাবাদ কংগ্রেস নেতৃত্ব এর পর দাবি করেন, সৌমেনকে ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা হয়েছে তৃণমূলে যোগ দিতে। যদিও তৃণমূলের তরফে কংগ্রেসের এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর যুক্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। তৃণমূলের পক্ষ থেকে মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘যিনি অপহৃত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে, তিনি স্বয়ং বলছেন, তিনি স্বেচ্ছায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। হাস্যকর নাটক করে কংগ্রেস নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।’’ অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক মনোজের দাবি, ‘‘অপহরণ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে সৌমেনক।’’ যদিও দলবদলকারী কংগ্রেস প্রার্থী সৌমেনের দাবি, ‘‘আমাকে কেউ অপহরণ করেনি, আমি দিদির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মতাদর্শ পরিবর্তন করে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’
প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের দাবি ছিল, বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চাননতলা লাগোয়া কারবালা রোডের কাছে বাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন সৌমেন। সেই সময় দু’টি চার চাকার গাড়ি রাস্তা আটকায় বলে অভিযোগ। সেখান থেকেই ওই জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করা হয় বলে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। সৌমেনের স্ত্রী রুনা সরকারের দাবি ছিল, পঞ্চায়েত ভোটে জেতার পর দল বদলের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। আলোচনায় বসার জন্য ডাকা হচ্ছিল। রাজি না হওয়াতেই এই অপহরণ করেছে তৃণমূল। রুনা এ-ও বলেছিলেন, অপহরণের আশঙ্কা বাড়িতেও জানিয়েছিলেন সৌমেন।
বহরমপুরের যে মণীন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী সৌমেন, সেখানে মোট আসন ৩০টি। এর মধ্যে ১০টি আসন পেয়েছে তৃণমূল, ১০টি আসনে পেয়েছে বিজেপি, ন’টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। একটি আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। শুক্রবার এক কংগ্রেসের জয়ী প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায়, তৃণমূলের পক্ষে এলেন ১১ জন সদস্য। এই পঞ্চায়েতে, এ বার কংগ্রেসের পক্ষে থাকলেন আট জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy