তখনও হাত বাঁধা রবিউলের। নিজস্ব চিত্র
হাসপাতাল চত্বরে তাকে বসে ঝিমোতে দেখে ঠিক চিনে ফেলেছিলেন ময়না বেওয়া। ছুটে গিয়ে চেপে ধরেছিলেন লোকটার জামার কলার। রাগে চিৎকার করে গাল দিতেও শুরু করেছিলেন। গোলমাল দেখে ততক্ষণে জমা হয়েছেন হাসপাতাল চত্বরে থাকা লোকজন। ময়নাদেবীর কাছ থেকে সবকিছু শুনে তাঁরাই লোকটিকে বেঁধে ফেলেন হাসপাতাল চত্বরের ল্যাম্প পোস্টের সঙ্গে। দু’-চারটি চড়-থাপ্পড়ও মারা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
মাঝবয়সী মানুষটির নাম রবিউল মণ্ডল। বাড়ি চাপড়ার পটুয়া গ্রামে। বেশ কয়েক দিন ধরে সে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল চত্বরে ডেরা বেঁধেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে রোগীর আত্মীয়দের ঠকিয়ে টাকা হাতানোর একাধিক অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
সরকারি হাসপাতাল চত্বরে ঠগ, জোচ্চোর, দালাল হামেশা পাওয়া যায়। হাসপাতালে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। তাঁদের অনেকেই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসেন। অনেকে হাসপাতালে এসে থতমত খেয়ে যান। কোথায় চিকিৎসক রয়েছেন, কোথায় পরীক্ষা করানো যাবে বা ওষুধ মিলবে বুঝতে পারেন না। এঁদেরই মূলত ‘টার্গেট’ করেন জোচ্চোরেরা। নানা ভাবে এঁদের সাহায্য করার নামে আলাপ জমিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন। সেইরকম অভিজ্ঞতাই হয়েছিল চাপড়ার প্রত্যন্ত এলাকা সুঁটিয়ার বাসিন্দা ময়না বেওয়ার।
মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনায় আহত ফুলমনি বিবির সঙ্গে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর বোন ময়না বেওয়া। রাতে যখন ট্রলি ঠেলার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না তখনই এগিয়ে এসেছিল রবিউল। আত্মীয়ের মতো তাঁদের সঙ্গে ছিল। বড় নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন ময়না বেওয়া। তাঁর দাবি, রবিউল তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি আমার বোনের মতো।’’ সরল বিশ্বাসে দিদির ওষুধ কেনার জন্য পাঁচশো টাকা তুলে দিয়েছিলেন তার হাতে। কিন্তু তার পর থেকে লোকটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।
ময়নার অভিযোগ, বেশ কিছু সময় পরে তিনি দেখতে পান, ওই ব্যক্তি খোশমেজাজে ফুলমনির স্বামীর সঙ্গে বসে বিড়ি খাচ্ছে। তার আগে ময়নাদের বাড়ি থেকে আনা ভাতও সে ভাগ করে খায়। তার পর হাত ধোওয়ার নাম করে উধাও হয়ে যায়। তখন ময়না জানতে পারেন, ওষুধ কেনার নাম করে ফুলমনির স্বামীর কাছ থেকেও ওই লোক ৪০০ টাকা নিয়েছে! শুনে তাঁর মাথায় যেন বাজ পড়ে।
শুক্রবার সকালে সেই লোকটাকে দেখে আর নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেননি ময়না। হাসপাতাল চত্বরে আরও জনাতিনেক মহিলা দাবি করেন যে, ওই লোক বিভিন্ন ভাবে আলাপ জমিয়ে তাঁদের কাছ থেকেও ওষুধ কিনে দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছিল। যেমন ঝামেলা বিবি নামে এক জন বলেন,“ওই লোকটা এসে আমাকে বলে, আমাকে নাকি ওর বোনের মত দেখতে। তার পর চা-ও খাওয়ায়। অনেক গল্পটল্প করে শেষে ওষুধ কিনে দেওয়ার নামে তিনশো টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।” যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে রবিউল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy