প্রতীকী ছবি।
ফের এক নাবালিকার অপমৃত্যুর পরে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল নদিয়ায়। রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় প্রথমে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। পরে তা বদল করে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। মৃতার পিসি, জামাইবাবু এবং জামাইবাবুর মামাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। শনিবার রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের দু'দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
শনিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (রানাঘাট) রূপান্তর সেনগুপ্ত বলেন, “মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ জানানো হয়েছে। পরিবারের লোকেরা দ্বিতীয় বার ময়না তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। শুক্রবার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে এক বার ময়নাতদন্ত হলেও আদালতের সম্মতি ক্রমে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে দ্বিতীয় বার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে।”
প্রথমে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে তা বদল করে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ কেন দায়ের করলেন মৃতার বাবা?
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, চড়কের মেলা দেখতে পিসতুতো দিদির বাড়ি গিয়েছিল কিশোরী। সেখানে বাউল গানের আসরও বসেছিল। অন্য কয়েক
জনের সঙ্গে মেয়েটিও নাচছিল। ওই বাসিন্দাদের দাবি, তার মুখে ‘মদের গন্ধ’ পেয়ে পিসি সকলের সামনে তাকে চড় মারেন এবং ঘরে ঢুকিয়ে বাড়ির সদর গেটে তালা লাগিয়ে দেন। কিছু ক্ষণ পরে তালা খুলে দেখা যায়, ঘরের ভিতর থেকে ছিটকিনি লাগানো রয়েছে। ডাকাডাকি করেও মেয়েটির সাড়া পাওয়া যায়নি। বাইরে থেকে ধাক্কা মেরে জানালা খুলে দেখা যায়, ওড়না দিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে সে ঝুলছে। ধাক্কাধাক্কি করে দরজা খুলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক ‘মৃত’ ঘোষণা করেন।
এর পর কিশোরীর বাবা থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন। শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যা নাগাদ কিশোরীর মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তখনই এলাকার কিছু লোকজন দাবি করতে থাকেন যে, এটা আত্মহত্যা নয়। মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, খুন করার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। এর পর পুলিশের কাছে নতুন করে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা।
শনিবার দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের সময়ে হাসপাতালে
উপস্থিত ছিলেন তিনি। তাঁর ব্যাখ্যা, “ময়নাতদন্তের পর মেয়ের মৃতদেহ দেখতে গিয়ে আমার খটকা লাগে। আত্মহত্যা করলে তো চোখ ঠেলে বেরোবে, জিভ বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ওর মুখ-চোখ একেবারে স্বাভাবিক ছিল।” তাঁর আরও বক্তব্য, “ঘরের পাখা অনেকটা উপরে। কোনও ভাবেই আমার মেয়ের হাত পাওয়ার কথা নয়। এই সব কারণেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমার মেয়েকে খুন করা হয়েছে।” ধর্ষণের ব্যাপারে নিশ্চিত হচ্ছেন কী ভাবে? মৃতার বাবা বলেন, “ধর্ষণ না করলে খুন করবে কেন? আর আমার মেয়ে মদ খেয়েছিল বলে আমি বিশ্বাস করি না।”
ঘটনাচক্রে এ দিনই একটি অডিয়ো ক্লিপ আনন্দবাজারের হাতে এসেছে, যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। সেখানে এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, “কাল বডি আসতে-আসতে সন্ধ্যাবেলা হয়ে যাবে। কাজ হবে না। তা হলে ডেটটা পরশু দিন কর। সে দিন যদি আসে তা হলে এখানে ‘পলিটিক্যাল মাইলেজ’ নিতে হবে আমাদের।” যে ভাবে হোক এফআইআর পরিবর্তন করতে হবে বলে যেমন ওই অডিয়োয় জানানো হচ্ছে, তেমনই স্থানীয় থানার ওসি-কে চাপে রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ওই কথোপকথনে ‘বাবুদা’ বলে এক জনের নামও বলা হচ্ছে।
নদিয়া জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র বাণীকুমার রায় বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। আইন আইনের পথেই চলবে।” তাঁর দাবি, “এই কথোপকথন থেকেই প্রমাণিত, বিজেপি কী ভাবে রাজ্য সরকারকে এবং বাংলাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে।” বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “এই কথোপকথন কার তা জানা নেই। আমাদের দলের কারও নয়।”
(সহ প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার ও সম্রাট চন্দ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy