বাগবাজার ঘাটে জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
তপ্ত রাজনীতির আঁচ লাগল উৎসবের গায়েও। কোন পুজোর দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে কয়েক মাস আগেই ছোটখাটো টানাপড়েনে জড়িয়েছিল তৃণমূল-বিজেপি। এ বার মহালয়ার তর্পণ হয়ে উঠল রাজনীতির হাতিয়ার। বাগবাজার ঘাটে গঙ্গায় নেমে ‘শহিদ’ স্মরণে তর্পণ করলেন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এবং তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণও করলেন তর্পণ শেষে। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা কাজ করবে, তাদের সরতেই হবে, মন্তব্য নাড্ডার।
শুক্রবার দুপুরেই কলকাতায় এসেছিলেন নাড্ডা। ঠাসা কর্মসূচি ছিল রাত পর্যন্ত। তবে পরের দিন অর্থাৎ মহালয়ায় তর্পণ ছাড়া আর কোনও বড় কর্মসূচি রাখেনি বিজেপি। সকালে নাড্ডা কলেজ স্কোয়্যারে গিয়ে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মালা দেন। তার পর চলে যান বাগবাজার ঘাটে। গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক হিংসায় এ রাজ্যে তাঁদের দলের যে কর্মীদের মৃত্যু হয়েছে বলে বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের পরিজনদের হাজির করা হয়েছিল গঙ্গার ঘাটে। তাঁদের নিয়ে প্রথমে ঘাটেই তর্পণ শুরু করেন জে পি নাড্ডা। তার পরে গঙ্গায় নেমে তর্পণের আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন তিনি। এই কর্মসূচিতে নাড্ডার সঙ্গে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিব প্রকাশ, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এবং আরও অনেকে।
তিথি অনুযায়ী মহালয়ার পর থেকে দেবীপক্ষ শুরু হয়। অর্থাৎ মহালয়া হল পিতৃপক্ষের শেষ দিন। কিন্তু বাংলার পরম্পরায় মহালয়া বা তর্পণ কালক্রমে দুর্গোৎসবেরই সম্প্রসারিত অঙ্গ হয়ে উঠেছে। দুর্গাপুজো এখন পশ্চিমবঙ্গের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ঠিকই। কিন্তু পিতৃপক্ষ, মহালয়া বা তর্পণ এখনও রয়ে গিয়েছে উৎসবের আঁতুড়ঘরের নিজস্বতা হিসেবেই। শহিদ স্মরণকে সেই তর্পণের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বিজেপির কার্যকরী সভাপতি যে আসলে সেই নিখাদ বাঙালিয়ানার অংশীদার হওয়ার চেষ্টাই করেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সংশয় তেমন নেই।
‘শহিদ’ পরিবারের সঙ্গে তর্পণে জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: সিবিআই অফিস থেকে মুকুল বেরোলেন, মমতার বিরুদ্ধে তুললেন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
তর্পণ শেষে বাগবাজার ঘাটেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন জে পি নাড্ডা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে এবং তৃণমূলকে সেখানেই তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। গত তিন বছরে এ রাজ্যে অন্তত ৮০ জন বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে নাড্ডা এ দিন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে জঙ্গলের রাজত্ব চলছে, সরকারি সন্ত্রাস চলছে।’’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে তিন হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, তার পরেও একই রকম সন্ত্রাস তৃণমূল বহাল রেখেছে বলে নাড্ডার অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন নীরব দর্শকের মতো আচরণ করছে বলেও তোপ দাগেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে— এই বার্তা এ দিন বার বার দেওয়ার চেষ্টা করেন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি। সে প্রসঙ্গেই বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা কাজ করবে, তাদের সরে যেতেই হবে।’’
নাড্ডার মন্তব্যের জবাব দেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা জঙ্গলরাজের অভিযোগ তোলেন তিনি। ফিরহাদের প্রশ্ন, ‘‘নাড্ডাজিদের দল যে সব রাজ্য শাসন করছে, সেখানে ধর্ষককে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, অভিযোগকারিণীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এটা জঙ্গলরাজ নয়? তফসিলি জাতির লোকজনকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে, কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এটা জঙ্গলরাজ নয়?’’
আরও পড়ুন: উপত্যকার তিন জায়গায় জঙ্গি হামলা, প্রাণ হারালেন এক জওয়ান, নিহত ৪ জঙ্গিও
‘শহিদ’দের পরিজনদের সঙ্গে তর্পণ করে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা এ দিন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দল সব রকম ভাবে দাঁড়াবে। বিজেপি-কে বাংলার সংস্কৃতির বিরোধী বলে বার বারই আক্রমণ করে তৃণমূল। একেবারে মহালয়া থেকে বাঙালির শারোদোৎসবে শামিল হয়ে এ দিন সেই তত্ত্ব নস্যাৎ করার চেষ্টাও করেছেন নাড্ডা। শুক্রবার রাতে রাজ্য বিজেপির নেতৃত্বকে নিয়ে তিনি যে বৈঠক করেছিলেন, সেখানে অমিত শাহের কলকাতা সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। ১ অক্টোবর কলকাতায় এসে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দল ও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবেন অমিত শাহ, জানা গিয়েছে বিজেপি সূত্রে। কলকাতার ৫টি পুজো মণ্ডপের উদ্বোধনও অমিত শাহের হাতে হতে পারে বলে খবর। সে বিষয়েও নাড্ডা আলোচনা সেরে নিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে বিজেপি এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy