আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ডেঙ্গি প্রতিরোধে আগেভাগেই সতর্ক হচ্ছে রাজ্য সরকার। আগামী গ্রীষ্ম এবং বর্ষার আগেই ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করতে প্রশাসনের সর্বস্তরে কড়া নির্দেশ দিল নবান্ন। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব এবং জেলাশাসকদের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। এই বৈঠকে চলতি বছরে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা (মাইক্রো প্ল্যানিং) করে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে পশ্চিমবঙ্গে। এই রোগে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর চাপ বেড়ে যায়। সেই কঠিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বার আগে থেকেই পরিকল্পনা করে এগোতে চাইছে রাজ্য সরকার। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত এলাকায় গত বছর ডেঙ্গির প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল, সেখানে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকে আগেভাগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের জন্য এ বার আরও আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালিয়ে ডেঙ্গির মশা খুঁজে তা শেষ করার কাজ করবে প্রশাসন। বিশেষ করে যে সব এলাকায় জল জমে থাকার প্রবণতা বেশি, সে সব স্থানে ড্রোনের মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেঙ্গি প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। তাই প্রতিটি পুরসভা এবং পঞ্চায়েতকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমা জল পরিষ্কার করা, ফগিং ও স্প্রে জোরদার করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করতে বিশেষ প্রচার চালানোর কথাও বলা হয়েছে। ডেঙ্গি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ অ্যাপ চালু করেছে। এ বার সেই অ্যাপের কার্যকর ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনকে এই অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে তা সরকারের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলেই মনে করছে নবান্নের আধিকারিকদের একাংশ। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই নানা বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করা শুরু করেছে। তাই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেভাগেই তৎপর হয়েছে প্রশাসন। নবান্ন সূত্রে খবর, ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধুমাত্র প্রশাসনিক তৎপরতাই যথেষ্ট নয়, সাধারণ মানুষেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার বলে বৈঠকে মন্তব্য করেছেন মুখ্যসচিব। তাই রাজ্য সরকার জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রচার চালানোর পরিকল্পনা করছে। কারণ, ডেঙ্গি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বর্ষার আগেই পরিকল্পিত ভাবে কাজ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই এ বার বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। নবান্নের কড়া মনোভাব এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলবে। তবে প্রশাসনের এই তৎপরতা জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৪ সালে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছিল রাজ্য সরকার। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা যেমন রাজ্যে কম ছিল, তেমনি ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিরোধীদের হাতে কোনও ধরনের অস্ত্র তুলে দিতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তাই এ বছর গ্রীষ্ম এবং বর্ষার সময় যাতে ডেঙ্গি মাথাচাড়া না দিতে পারে, সে বিষয়ে আগাম পদক্ষেপ করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই এ বিষয়ে বৈঠক করে রাজ্য সরকারের অবস্থান জেলা প্রশাসন তথা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।