Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রাস্তার দেখভালে গ্রামীণ পূর্ত বিভাগ গড়ার চিন্তা বঙ্গে

তবে পূর্ত বিভাগের সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তা তৈরির বিষয়টিকে এক করে দেখতে রাজি নন নবান্নের কর্তাদের একাংশ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৩
Share: Save:

রাজ্যে গত উনিশ বছরে ৩৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। খরচ হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গ্রামে সব মিলিয়ে ৭৩৫০টি নতুন পাকা রাস্তা বা পুরনো রাস্তার সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনও গ্রামীণ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট বা গ্রামীণ পূর্ত বিভাগ তৈরি হয়নি বাংলায়। অথচ অন্য সব রাজ্যেই গ্রামে পাকা রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক ডিরেক্টরেট গড়ে তোলা হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারদেরও। ১৯ বছর পরে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, রাস্তা তৈরি হলেও তার গুণগত মান নিয়ে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এই অবস্থায় এ রাজ্যেও একটি গ্রামীণ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট তৈরির প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পূর্ত দফতরের চেয়েও আমরা বছরে বেশি রাস্তা তৈরি করি। লোকলস্কর কার্যত কিছু নেই। গ্রামীণ পূর্তের জন্য আলাদা একটি শাখা খোলা গেলে পরিকাঠামো উন্নয়নে আরও সুবিধা হবে।’’

তবে পূর্ত বিভাগের সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তা তৈরির বিষয়টিকে এক করে দেখতে রাজি নন নবান্নের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, পূর্ত বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে জাতীয় সড়কের বড় অংশের রক্ষণাবেক্ষণের ভার। পাশাপাশি সব রাজ্য সড়ক নির্মাণ, সম্প্রসারণ ও দেখভালের কাজ করে পূর্ত সড়ক বিভাগ। দেখতে হয় সেতু নির্মাণ ও দেখভালের কাজও। ফলে পূর্ত বিভাগের বিশাল দায়িত্বের সঙ্গে গ্রামীণ সড়কের তুলনা চলে না।

পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা এই যুক্তি মানতে রাজি নন। তাঁদের মতে, গত ২০ বছরে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। সেই জন্যই রাজ্য সড়কের সঙ্গে যুক্ত সব গ্রামীণ রাস্তা প্রথম ধাপে পাকা করা হয়েছে। পরের ধাপে প্রায় সব মোরাম রাস্তায় পিচ পড়েছে।

রাজ্যের দাবি, ৫০০ বাসিন্দার প্রতিটি মৌজাও এখন পাকা রাস্তা দিয়ে সংযুক্ত। কেন্দ্র এখন গ্রামীণ রাস্তাকে দেড় বা দু’টি লেনে বিন্যস্ত করার কাজে হাত দিয়েছে।

সেই জন্যই সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকায় ৩৭ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে। এখন তাদের সম্প্রসারণ ও দেখভালের জন্য পৃথক পরিকাঠামো প্রয়োজন বলে পঞ্চায়েত কর্তারা জানাচ্ছেন। হিসেব বলছে, গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজে শ’তিনেক ইঞ্জিনিয়ার যুক্ত আছেন। রাস্তা তৈরি হয় মূলত জেলা পরিষদের অধীনে। সেই জন্য রাস্তা নির্বাচন, কাজের গুণমান নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের চেয়েও স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা মুখ্য হয়ে ওঠে। পঞ্চায়েত-কর্তারা জানান, পূর্ত দফতরে অন্তত ৪০ জন চিফ, শ’খানেক সুপারিনটেন্ডেন্ট, শ’পাঁচেক এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেন। সব মিলিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত কর্মী-অফিসারের সংখ্যা তিন হাজার। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ দেখেন এক জন চিফ, চার জন সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং ৩০ জন এগ্‌জ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। সব মিলিয়ে কর্মী-সংখ্যা তিনশো।

পঞ্চায়েত-কর্তাদের দাবি, গ্রামীণ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেট তৈরি হলে পঞ্চায়েত এলাকার পাকা রাস্তাগুলির অবস্থা ভাল হবে। সম্প্রতি পূর্ত দফতরের কাঠামো তিনটি অঞ্চল থেকে ভেঙে পাঁচ করা হয়েছে। পৃথক শাখা খোলা হয়েছে সেতু, তথ্যপ্রযুক্তির জন্য। তার পরেই গ্রামীণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ খোলার দাবি জোরালো হয়েছে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী সিদ্ধান্ত নেন, তার উপরেই সব নির্ভর করছে বলে জানাচ্ছেন পঞ্চায়েত-কর্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Rural PWD State Government Subrata Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy