চলতি আর্থিক বছরের মূলধনী খাতে খরচের পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রমাণ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির থেকে চেয়েছে নবান্ন। উল্লেখ্য, মূলধনী খাতে খরচের, প্রধানত পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে, উপরে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয় কেন্দ্র। গত কয়েক বছর ধরে দেশের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও এই খাতে বরাদ্দ অর্থ অনুদান আকারে পেয়েছে। আগামী অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ আরও বাড়িয়েছে কেন্দ্র। সেই সূত্রে আগের থেকে আরও বেশি বরাদ্দ পাওয়ার আশা করছে এই রাজ্যও। তাই বিভিন্ন দফতরের কাছ থেকে চলতি আর্থিক বছরে খরচের তথ্যপ্রমাণ চাওয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে করা হচ্ছে।
মূলধনী খাতে বরাদ্দ অর্থ ৫০ বছরের জন্য সুদবিহীন ঋণ হিসেবে দেয় কেন্দ্র। তবে কিছু শর্তও বেঁধে দেয় তারা। সেই শর্ত মেনে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ওই অর্থ খরচ করা যায়। এ রাজ্যে পূর্ত, সেচ, জনস্বাস্থ্য কারিগরির মতো পরিকাঠামো নির্মাণকারী দফতর এই বরাদ্দ পায়। পাশাপাশি, পর্যটন উন্নয়নের জন্যও এই তহবিল ব্যবহার করা যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এই খাতে প্রায় ন’হাজার কোটি টাকা পেয়েছে রাজ্য। আগামী ৩১ মার্চ অর্থবর্ষ শেষ হবে। তার আগে কোন দফতর কী নির্মাণে কত টাকা খরচ করেছে, তারই পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়েছে। খরচের উপযুক্ত প্রমাণও দাখিল করতে বলা হয়েছে।
প্রশাসনের অন্দরের খবর, জনস্বাস্থ্য কারিগরি-সহ কয়েকটি দফতর পুরো টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করতে পেরেছে। আর কয়েকটি দফতরের খরচ কিছু বাকি আছে। তবে প্রশাসনের আশা, ৩১ মার্চের আগে সেই কাজ শেষ হবে। এক কর্তার কথায়, “এই প্রমাণ কেন্দ্রের কাছেই দাখিল করার কথা। হয় তো তাই তা চাওয়া হয়েছে।” প্রসঙ্গত, কেন্দ্র ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে এই সুবিধা চালু করেছিল। মোট বরাদ্দ করা হয়েছিল প্রায় ১.০৯ লক্ষ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ বছরে বরাদ্দ দেড় লক্ষ কোটি টাকা হলেও সংশোধিত হিসাবে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। তার মধ্যে এ বছর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১.২২ লক্ষ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে কেন্দ্র। তবে প্রায় ১.১১ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ তার মধ্যে খরচ করেছে ৯৭২৯ কোটি টাকা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, খরচের নিরিখে এই রাজ্য চতুর্থ স্থানে রয়েছে। তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের উপরে রয়েছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ। প্রশ্ন উঠছে যে, এত বরাদ্দের ব্যবহারে কেন পিছিয়ে থাকছে রাজ্যগুলি? প্রশাসনিক সূত্রের ব্যখ্যা, দেড় লক্ষ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় বরাদ্দের মধ্যে ৫৫ হাজার কোটি টাকা শর্তহীন। কিন্তু বাকি ৯৫ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষ। শর্তহীন বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য দাবি করছে রাজ্যগুলি। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ফের দেড় লক্ষ কোটি টাকা এই খাতে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। রাজ্যের আশা, আগামী বছর তুলনায় কিছু বেশি বরাদ্দ মিলবে। কোষাগারের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বরাদ্দ জরুরি বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)