দিল্লির তিরের মুখে রাজ্য সরকারের ঘরে-বাইরে এখন প্রশ্নের পর প্রশ্ন।
আবাস যোজনা, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে হরেক অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকে ঘিরে দুর্যোগের আবহ ঘনিয়েছিল বেশ কিছু দিন আগে। তার মধ্যেই কি অন্যতর ‘উত্তুরে ঝড়ের’ আঁচ-আভাস ছিল? আর অশনি-সঙ্কেত ছিল বলেই কি মিড-ডে মিলের বরাদ্দ অন্যত্র খরচ করার বিষয়ে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে অনেক আগে সতর্ক করেছিল নবান্ন? প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরেই।
স্কুলে দুপুরের খাবার প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্র। শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে। তবে প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, কয়েক মাস আগেই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহল থেকে মোবাইল বার্তায় মিড-ডে মিল খাতে বরাদ্দ নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল সব জেলা প্রশাসনকে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছিল কেন্দ্রীয় দল। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, তার আগে, ২৯ জানুয়ারি নাগাদ মোবাইল বার্তাটি যায় জেলায়।
তা হলে কি এই নয়ছয়ের দায়ভার জেলা প্রশাসনগুলির উপরেই বর্তাচ্ছে? কেন্দ্রের অভিযোগ অনুযায়ী গত অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে ১৪০.২৫ কোটি মিড-ডে মিল দেওয়ার কথা কেন্দ্রকে জানিয়েছিল রাজ্য। জেলা প্রশাসন কিন্তু রাজ্যকে জানিয়েছিল, ওই সময়ে ১২৪.২২ কোটি মিড-ডে মিল দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। যার অর্থ দাঁড়ায়, সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেখিয়েছিল রাজ্য সরকারই। কিন্তু এই অভিযোগ মানতে রাজি নয় রাজ্য। সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, জেলা তো কমই দেখিয়েছিল। তা হলে তাদের সতর্ক করার কথা উঠছে কেন?
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলার স্কুল থেকে মিড-ডে মিলের হিসাব অনলাইনে রাজ্যে পাঠানোর সময় একই সঙ্গে চলে যায় কেন্দ্রে। তাই রাজ্যের আলাদা ভাবে কারচুপি করে বেশি করে দেখানোর জায়গাই নেই। তা ছাড়া মিড-ডে মিলের হিসাব নিয়ে কিছু বলতে হলে তা বলবে সিএজি। জয়েন্ট রিভিউ মিশনের বলার কোনও যোগ্যতা আছে কি?’’
অতীতে মিড-ডে মিল খাতের টাকা অন্যত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী শিবির। অভিযোগ, সরকারি অনুষ্ঠানে, এমনকি বীরভূমের বগটুইয়ে আগুনে পুড়ে মৃতদের ক্ষতিপূরণে এই প্রকল্প থেকে টাকা খরচ করা হয়েছিল। অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাজ্য।
জেলা-কর্তাদের কাছে পাঠানো মোবাইল বার্তায় রাজ্য বলেছিল, স্কুল বা উচ্চশিক্ষার আওতায় কেন্দ্রীয় অনুদানভুক্ত প্রকল্পগুলির (সিএসএস) ক্ষেত্রে এমন কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। জেলা প্রশাসনগুলির ‘চাপ’ রাজ্য সরকার বোঝে। তবু এই ধরনের কোনও ঘটনা যাতে না-ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন বলেন, “আপৎকালীন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনগুলি তাৎক্ষণিক খরচের জন্য মিড-ডে মিল বা এই ধরনের কোনও তাহবিল থেকে টাকা নেওয়ার কথা বলে। আমরা সতর্ক করে দিয়েছি, এটা যেন করা না-হয়। বগটুইয়ের জন্য মিড-ডে মিলের তহবিল থেকে চেক কাটা হয়েছিল। তা ভাঙানো হয়নি।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)