সমাপ্তি রুইদাস। —নিজস্ব চিত্র
উচ্চ মাধ্যমিকে একানব্বই শতাংশ নম্বর পেয়ে নার্সিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন গ্রামের মেধাবী ছাত্রী। শনিবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের নার্সিং হস্টেলের পাঁচতলার বারান্দা থেকে সমাপ্তি রুইদাস (১৮) নামে সেই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সমাপ্তির ঘরে একটি সইবিহীন সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, নার্সিংয়ের পড়াশোনার সবটা ইংরেজিতে হওয়ায় তিনি অসম্ভব মানসিক চাপে ছিলেন। যদিও মায়ের দাবি, হস্টেলের ‘সিনিয়র’ দিদিরা পঞ্চাশ হাজার টাকা না-পেলে সমাপ্তিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। এ নিয়ে পুলিশের কাছে মৃতার পরিবার অবশ্য কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ শিল্পা দে এবং রিঙ্কি সিংহ নামে নার্সিংয়ের দুই ছাত্রী পাঁচতলার বারান্দার স্তম্ভ থেকে সমাপ্তির দেহ ঝুলতে দেখে হস্টেল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। গলায় শাড়ির ফাঁস দেওয়া অবস্থায় পৌনে ৭টা নাগাদ দেহটি উদ্ধার করে বেনিয়াপুকুর থানার পুলিশ।
হাসপাতালের এক আধিকারিক জানান, বাঁকুড়ার কোতুলপুরের তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর সইবিহীন সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ‘‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এই চাপ আর নিতে পারছি না। আমি এক পাতা বাংলা মুখস্থ করে নিই। এখানে তো সবই ইংরেজি। সবাই বলছে, হয়ে যাবে। কিন্তু এত দিন চেষ্টা করলাম। কিছুই হল না।’’ এ দিন মৃতার এক সহপাঠী জানান, যাবতীয় বিষয় ইংরেজিতে পড়তে গিয়ে অসুবিধা হচ্ছে বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন সমাপ্তি। বেশি রাতে আলো জ্বালিয়ে পড়ার সুযোগ ছিল না বলেও তিনি চাপে ছিলেন।
যদিও মা বুলাদেবীর অভিযোগ, ৫০ হাজার টাকা না-পেলে কিছু সিনিয়র তাঁর মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁর দাবি, সেই হুমকির কথা সমাপ্তি বাবাকে জানান। বাবা টাকা জোগাড় করে রবিবার কলকাতা যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মেয়েকে। মায়ের কথায়, ‘‘মেয়ে ছুটিতে আসার পরে আর কলকাতায় যেতে চাইছিল না। ধার-দেনা করে পড়তে পাঠিয়েছিলাম। ওকে বলেছিলাম, সব দিক ভেবে যা ভাল বোঝে, তা-ই যেন করে।’’
মেয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখার জন্য কলকাতায় পৌঁছে ছাত্রীর বাবা সুকুমার রুইদাস লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছিলেন মা। যদিও সন্ধ্যায় সুকুমার বলেন, ‘‘আমার মেয়ে আত্মহত্যাই করেছে।’’ কিন্তু তাঁর স্ত্রী তো অন্য কথা বলছেন? পেশায় রং-মিস্ত্রি সুকুমারের বক্তব্য, ‘‘মেয়ে ওর যা কিছু সমস্যা আমাকেই বলত। আমার স্ত্রীকে অন্য কিছু বলে থাকলে জানি না। তবে আমাকে বলেছিল, সিলেবাস খুব শক্ত লাগছে। পড়াশোনার সবটা ইংরেজিতে হওয়ায় খুব চাপে ছিল। তাই বলছি, চাপেই এটা করেছে।’’
শুক্রবার রাত ১০টা নাগাদ বাড়ির সঙ্গে শেষ কথা হয় সমাপ্তির। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুইসাইড নোটে পড়াশোনার জন্য বাবার পাঁচ লক্ষ টাকা দেনার কথা লেখা রয়েছে। সেই জন্য বাড়ি ফিরে গেলে বাবার কী হবে, এই ভেবে কষ্টের কথাও আছে তাতে। বাবা বলেন, ‘‘এ সবই আমাকে জানিয়েছিল। আমি বলেছিলাম, ‘মা, তোমাকে এত ভাবতে হবে না’।’’ মায়ের বক্তব্যে অবশ্য ভিন্ন সুর।
এ দিন মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য ভবনের নার্সিং বিভাগের এক আধিকারিক জানান, হস্টেলে এখন র্যাগিং হয় না। সিনিয়র ‘দিদি’রা সত্যিই টাকা চেয়ে থাকলে শিক্ষিকাদের কাছে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ জানাতে পারতেন। তা হলে কি ইংরেজি-ভীতিই কারণ? সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করানো হল না কেন? ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘কাউন্সেলিং হয়েছিল। তবু মেয়েটি ভরসা রাখতে পারল না।’’ ন্যাশনালের সুপার সন্দীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ছাত্রীর দেহের ময়না-তদন্ত করানো হয়েছে। পুলিশ তাদের মতো করে বিষয়টি দেখছে। কী কী ঘটেছিল তা জানতে আমরা আলাদা করে চার সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছি। যত দ্রুত সম্ভব, সেই কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy