একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শিখা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।
কয়লাপাচার-কাণ্ডে সিবিআইয়ের নজরে থাকা বিজেপি নেতা তথা ‘কয়লা মাফিয়া’ জয়দেব খাঁ-র বিরুদ্ধে এক যুবককে খুনের অভিযোগে উঠল। অভিযুক্ত জয়দেবকে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার আসানসোলের রানিগঞ্জে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবার-সহ স্থানীয়েরা।
সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রভাত মণ্ডল নামে বছর বাইশের এক যুবকের দেহ উদ্ধার করে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ। একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তা পড়েছিল বলে দাবি। সুপ্রভাত জামুড়িয়া থানার ডাহুকা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
মৃতের পরিবার জানিয়েছে, জয়দেবের ইটভাটায় প্রায় আট মাস ধরে কাজ করতেন সুপ্রভাত। তাঁর মা-বাবার দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের সময় ৮ কোটি টাকা ভর্তি একটি ব্যাগ সুপ্রভাতের কাছে রাখতে দিয়েছিলেন জয়দেব। তবে পরে সে টাকা ফেরত নিয়ে নেন তিনি। অভিযোগ, লক্ষীপুজোর পর সুপ্রভাতকে ইটভাটার কাজের জন্য তুলে নিয়ে যান জয়দেব। সেখানে প্রতি দিন তাঁর ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালানো হত। ছেলের সঙ্গে ইটভাটায় দেখা করতে গিয়ে অত্যাচারের শিকার হন তাঁর মা-বাবা। শনিবার রানিগঞ্জ থানা থেকে সুপ্রভাতের মৃত্যুর খবর আসে। একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুপ্রভাতের দেহ রাখা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে কী ভাবে সুপ্রভাতের দেহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছল, তা নিয়ে কোনও সদুত্তর মেলেনি।
আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে সুপ্রভাতের বাবা উত্তম মণ্ডলের দাবি, ‘‘(বিধানসভা) ভোটের সময় সিবিআইয়ের ভয়ে জয়দেবের শাশুড়ি মধুবালা পাত্রের ৮ কোটি টাকা আমার ছেলেকে রাখতে দেয় জয়দেব। ছেলেকে ফোন করে টাকার ব্যাগটি নিয়ে যায় জয়দেব। ওই টাকা নয়ছয় করেছে জয়দেবের লোকজন। তার পর ছেলের নামে সে দোষ চাপিয়েছে। জয়দেব ছেলেকে বলেছিল, ‘৮ কোটি টাকা তোমাকে রাখতে দিয়েছি। সে টাকা আমি তোমার থেকে পাব।’ লক্ষ্মীপুজোর সময় দেখা করতে গেলে আমাদের উপর অত্যাচার করে জয়দেবরা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘শনিবার রাত ৮টা ১০ নাগাদ আমাকে ফোন করে আসতে বলেছিল জয়দেব। বাড়িতে গাড়িও পাঠালেও আমি যাইনি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশ বাড়িতে এসে বলে, ‘তোমার ছেলের লাশ রয়েছে রানিগঞ্জ থানায়।’ জয়দেব ও তাঁর লোকজন হুমকি দিয়েছিল যে পুলিশের কাছে গেলে আমার ছেলেকে খুন করবে। শেষে তা-ই করল। আমি জানি না ছেলের লাশ কী ভাবে রানিগঞ্জ থানায় গেল?’’
যদিও আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে ৮ কোটি টাকা ভর্তি ব্যাগের কথা বললেও পুলিশে অভিযোগ জানানোর সময় এর উল্লেখ করেননি সুপ্রভাতের পরিবার। সেখানে একটি জমিকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে জয়দেব খাঁ, তাঁর স্ত্রী এবং জয়দেবের কয়েক জন অনুগামী সুপ্রভাতকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন উত্তম।
একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর সুপ্রভাতের মা শিখা মণ্ডলের দাবি, ‘‘জয়দেবরা ওর (সুপ্রভাতের) বাবার হাত ভেঙে দেয়। বুকে পা দিয়ে মারে। জয়দেব খাঁ-র স্ত্রী অনিতা খাঁ আমাকেও মারধর করেছে। ওদের সঙ্গে রাজকুমার, অয়ন, পাপ্পু, অমিত, উদয় আরও অনেকে ছিল। আমার একমাত্র ছেলেকে ওরা কে়ড়ে নিল। ওদের শাস্তি দেওয়া হোক।’’
জয়দেবের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে রানিগঞ্জ থানার পুলিশ। কী কারণে সুপ্রভাতের মৃত্যু হল, তা জানার জন্য ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পাশাপাশি তদন্তে নেমেছে তারা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (সেন্ট্রাল) তথাগত পাণ্ডে বলেন, ‘‘রানিগঞ্জ হেল্থ সেন্টার থেকে সুপ্রভাতের দেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় সুপ্রভাতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এখনও জয়দেব খাঁ-র খোঁজ পাওয়া যায়নি। আসল ঘটনা কী, তা তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই জানা যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy