Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Crime

কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে অত্যাধুনিক যন্ত্র, আসিফ কাণ্ডে গভীর রহস্য দেখছে পুলিশ

আসিফকে নিয়ে পুলিশ সতর্ক। বিশেষ করে যে এলাকায় আসিফ থাকত, ২০১৪ সালে সেই তল্লাট থেকে জঙ্গিযোগের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল জিয়াউল হক।

মহম্মদ আসিফের (বাঁ দিকে) সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধৃত তার দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহম্মদ মাফুজ।

মহম্মদ আসিফের (বাঁ দিকে) সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ধৃত তার দুই বন্ধু সাবির আলি ও মহম্মদ মাফুজ। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
কালিয়াচক শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

মহম্মদ আসিফের বাড়ি যেখানে, সেখান থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘণ্টাখানেকের পথ। কাঁটাতার থাকলেও ও-পার থেকে বেতার তরঙ্গ ভেসে আসতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। এমনই একটি জায়গায় বাড়িতে নানা আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র বা গ্যাজেট বসিয়েছিল মহম্মদ আসিফ। এই সব দামি যন্ত্রপাতি কেনার জন্যই সে প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করেছিল। আরও কিছু বিক্রির সুযোগও খুঁজছিল। পুলিশের কাছে এখন বড় প্রশ্ন, এত দামি এবং আধুনিক যন্ত্র দিয়ে কী করছিল আসিফ? কালিয়াচকের অন্য প্রান্ত থেকে সদ্য বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছেন চিনা নাগরিক হান চুনওয়েই। তাঁর কাছ থেকেও একাধিক আই-ফোন, অ্যাপলের ল্যাপটপ এবং টাকা ট্রান্সফারের যন্ত্রের মতো যন্ত্র মিলেছে। তাই আসিফকে নিয়ে পুলিশ সতর্ক। বিশেষ করে যে এলাকায় আসিফ থাকত, ২০১৪ সালে সেই তল্লাট থেকে জঙ্গিযোগের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল জিয়াউল হক। পুলিশ তাই আসিফের খুনের সঙ্গে কোনও সন্ত্রাসবাদী যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। তার যন্ত্রগুলি পরীক্ষা করতে ফরেন্সিক দলের সাহায্যও নেওয়া হবে।

শনিবার রাতেই আসিফকে জেরা করে তার দুই বন্ধু মহম্মদ মাফুজ ও সাবির আলিকে অস্ত্র সমেত গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, পাঁচটি সেভেন এমএম পিস্তল, ৮৪ রাউন্ড কার্তুজ এবং ১০টি ম্যাগাজিন উদ্ধার হয়েছে ওই দু’জনের কাছ থেকে। মাফুজ কালিয়াচক কলেজের প্রথম বর্ষের ভূগোল অনার্স এবং সাবির বেঙ্গালুরুতে জিএনএমের ছাত্র। আসিফই সাত দিন আগে টাকার বিনিময়ে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রগুলি রাখতে দিয়েছিল বলে দাবি পুলিশের। রবিবার আসিফকে ১২ দিন এবং মাফুজ ও সাবিরকে চার দিন করে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয় মালদহ জেলা আদালত।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মাধ্যমিকের গণ্ডি টপকানোর পর থেকেই বৈদ্যুতিন যন্ত্র কেনার ঝোঁক বাড়তে থাকে আসিফের। অনলাইনে যন্ত্রগুলি কিনত সে। পুলিশ জানিয়েছে, এর জন্য বাবা জাওয়াদ আলির ৬ বিঘা লিচুর বাগান, পাঁচ বিঘা চাষের জমি, দু’টি ডাম্পার, একটি বোলেরো, দু’টি মোটরবাইক বছর খানেকের মধ্যেই বিক্রি করে দেয় আসিফ। সব মিলিয়ে যার মূল্য কোটি টাকার উপরে। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কম্পিউটার, ল্যাপটপ, একাধিক মোবাইল ফোন, রাউটার, ওয়াকিটকির মতো যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আরও বৈদ্যুতিন যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে, যার ব্যবহার আমরাও জানি না। যন্ত্রের ব্যবহার জানতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’’

পুলিশ এ-ও জানিয়েছে, বাবা জাওয়াদ আলি, মা ইরাবিবি, দাদা মহম্মদ আরিফ, বোন আরিফা খাতুন এবং ঠাকুমা আলেকজান বেওয়াকে খুনের জন্য দু’টি পরিকল্পনা করেছিল আসিফ। প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাঁচ জনকেই গুলি করে খুনের ছক কষেছিল সে। এর জন্য প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্রগুলি বাবাকে দিয়েই কিনিয়েছিল। দাম পড়েছিল দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু তার অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ ছিল না। তাই শেষে দ্বিতীয় পরিকল্পনা নিতে হয় আসিফকে। সেই মতো ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচৈতন্য করে চার জনকে খুন করে সে।

ছকের হেরফেরে প্রাণে বেঁচে যান রসায়নে স্নাতক স্তরে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফ। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দাদা আরিফের পানীয়তে ঘুমের ওষুধের পরিমাণ কম ছিল। তাই জলে ফেললে হুঁশ ফিরে যায় তাঁর। এরপরেই ধস্তাধস্তি করে পালিয়ে যান আরিফ।’’ তার পরেও তাঁর উপরে নজর রাখত আসিফ। সেই ভয়েই বাবা, মা, ঠাকুমা, বোন খুনের প্রায় চার মাসের মধ্যে আর বাড়িমুখো হননি আরিফ। পুলিশের দাবি, আরিফ এখনও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।

পুলিশ জানিয়েছে, খুন করে সবাইকে পুঁতে দেওয়ার জন্যই গুদামঘরটি তৈরি করে আসিফ। মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনীশ সরকার বলেন, ‘‘আসিফের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বৈদ্যুতিন যন্ত্রের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুমান, টাকার জন্য খুন। খুনের নেপথ্যে আরও কোনও বিষয় রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Murder police Crime kaliachak
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy