আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিতা নিহত বোনের কথা বলার তাগিদেই মগরাহাটের গ্রাম থেকে উজিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন কারিমা খাতুন। কথা বলবেন কী, কান্নায় গলা বুজে গেল তাঁর! দেড় দশক আগে ১৩ বছরের কারিমাকে ভিন্ রাজ্যে বিক্রি করে এক প্রৌঢ়ের সঙ্গে বিয়ে দেয় পাচার চক্রের দালালেরা। কোলের দুই সন্তানকে নিয়ে ছ’বছর আগে কোনওমতে পালিয়ে আসেন তিনি। কারিমা এখন জরির কাজ করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন, স্কুলে পড়াচ্ছেন তাঁর ছেলেমেয়েদের।
এমন অনেক নিপীড়িত, নিষ্পেষিত কিন্তু অশ্রুত স্বর সম্প্রতি ভাষা খুঁজে পেল মহাবোধি সোসাইটি হলের একটি অনুষ্ঠানে। আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে রাত দখলের আহ্বানের ধাঁচেই ‘মুসলিম মেয়েরা দখল নাও’ ডাক দিয়ে মুসলিম পারিবারিক আইনের বৈষম্যমূলক নানা দিক সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নানা জেলার মেয়েরা। মগরাহাট বা ভগবানগোলা, উলুবেড়িয়া বা পান্ডুয়া থেকে আসা মেয়েরা নিজেদের জীবনের লড়াইয়ের গল্প বলতে বলতেই আর জি করের সেই বোনের জন্যও কাঁদলেন।
মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার মাফরুজা খাতুন, হীরা খাতুনও সভায় নিজের কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজক রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতি, সোসাইটি ফর এমপাওয়ারমেন্ট এই মেয়েদের ক্ষমতায়নের কাজে শরিক। তাঁদের তরফে অধ্যাপিকা আফরোজা খাতুন, সমাজকর্মী খাদিজা বানুরা বলছিলেন, “মুসলিম পারিবারিক আইনের নানা বৈষম্য পাকিস্তান কবেই সংস্কার করেছে, কিন্তু ভারতের হেলদোল নেই। অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েরা পুরুষদের তুলনায় সম্পত্তির ভাগ কম পান। তা ছাড়া, একসঙ্গে তিন তালাক বন্ধ করার আইন হলেও একতরফা ভাবে ধাপে ধাপে মৌখিক তালাক পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।” নিকাহ হালালার মতো পীড়নমূলক সামাজিক রীতিও বিক্ষিপ্ত ভাবে বহাল আছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। আফরোজা, খাদিজাদের বিবৃতিতে আক্ষেপ, “হিন্দু মৌলবাদ যেমন দেশের মুসলিম সমাজকে আক্রমণ করছে, তেমনই হিন্দু মৌলবাদ সুবিধা পাবে ভেবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেও মুসলিম মেয়েদের কষ্টে নীরব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy