Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Murshidabad

দু’বছর আগে তৃতীয়ায় নাবালিকাকে গণধর্ষণ! এ বছর চতুর্থীতে দোষীদের যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ

দোষীদের দু’লক্ষ টাকা করেও জরিমানা করেছেন বিচারক। তিনি জানান, রাজ্য সরকার আরও চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে।

—প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা ও লালবাগ শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:০১
Share: Save:

দু’বছর আগের পুজোর ঘটনা। তৃতীয়ার দিনে প্রেমিকাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল প্রেমিক-সহ চার জনের বিরুদ্ধে। এ বছর পুজোয় সেই তৃতীয়ার দিনেই অর্থাৎ, মঙ্গলবার ওই চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল মুর্শিদাবাদের লালবাগ বিশেষ পকসো আদালত। বুধবার চতুর্থীতে হল সাজা ঘোষণা। চার জনের আমৃত্যু যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিলেন বিচারক দীপ্তমান ঘোষ।

দোষীদের দু’লক্ষ টাকা করেও জরিমানা করেছেন বিচারক। তিনি জানান, রাজ্য সরকার আরও চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। চার দোষীর দেওয়া জরিমানার আট লক্ষ টাকা এবং সরকারের থেকে চার লক্ষ টাকা, সব মিলিয়ে মোট ১২ লক্ষ টাকাই পাবেন নির্যাতিতা। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারকেও বিচারকের নির্দেশ, এই জরিমানার টাকা নির্যাতিতা যাতে উচ্চ শিক্ষার জন্য, সমাজে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য যাতে সঠিক ভাবে খরচ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে বিচার প্রক্রিয়া শেষ হতে লেগেছে মাত্র ৫০ দিন। নির্যাতিতার পরিবার গরিব। ঘটনার পর থেকে গোটা পরিবার গ্রামছাড়া ছিল। অন্য জায়গায় থেকে সাক্ষী দিতেন তারা। ঘটনার দু’বছর পর এ বার তারা বাড়ি ফিরবে। সরকারি আইনজীবীর কথায়, ‘‘মেয়েরা তো মায়ের জাত। দু’বছর আগে তৃতীয়ার দিন যে ঘটনা ঘটেছিল, আজ অভিযুক্তদের শাস্তি পাইয়ে দিয়ে মা দুর্গাকে এই রায় উৎসর্গ করলাম। মেয়েটি যাতে আগামী দিনগুলিতে মাথা উঁচু করে যাতে বাঁচতে পারে, সেই জন্যই ক্ষতিপূরণের আবেদন।’’

ঘটনাটি ২০২১ সালের। পুজোর সময় মুর্শিদাবাদ শহরে মামার বাড়িতে বেড়াতে যায় বছর পনেরোর এক নাবালিকা। পুলিশ সূত্রে খবর, ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে আলাপ হয় মেয়েটির। যুবকের বাড়ি আবার নাবালিকার মামার বাড়িরই আশপাশে। কিছু দিনের মধ্যে দু’জনের মধ্যে প্রণয়ঘটিত সম্পর্ক হয়। তাদের ফোনে কথাবার্তা হত। মাঝেমধ্যে দেখাসাক্ষাৎ। তাই মামার বাড়িতে বেড়াতে আসতেই নাবালিকার সঙ্গে দেখা করতে জোরাজুরি করেন ‘প্রেমিক।’

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয়ার রাতে আচমকা ফোন করে মেয়েটিকে দেখা করতে বলেন ‘প্রেমিক’। এক রকম বাধ্য হয়েই রাজি হয় মেয়েটি। মামার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি নির্জন জায়গায় দেখা করতে যায় সে। পৌঁছনো মাত্রই খটকা লাগে তার। দেখে, ওই যুবকের সঙ্গে আরও তিন জন আছেন। মেয়েটি জানতে পারে, তাঁরা যুবকের বন্ধু। সেখান থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে চায় মেয়েটি। কিন্তু ‘প্রেমিক’ তার পথ আটকে দাঁড়ান। তার পরেই চার জন মিলে নাবালিকাকে গণধর্ষণ করেন। অভিযুক্তেরা ছোট ছোট ভিডিয়ো ক্লিপ করে রাখে ওই ঘটনার। ফোনটি ছিল সেই প্রেমিকেরই। অভিযোগ, ধর্ষণের পর নাবালিকাকে ভয় দেখানো হয়। অত্যাচারের কথা লোক জানাজানি হলে ভিডিয়ো ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। মেয়েটি অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফেরে। প্রথমে বাড়ির কাউকেই কিছু বলেনি সে। পরে ওই ভিডিয়ো ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে নির্যাতিতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান সেই ‘প্রেমিক’। ফোনে বার বার হুমকি সত্ত্বেও মেয়েটি আর প্ররোচনায় পা দেয়নি। এর পরেই মেয়েটির মায়ের মোবাইলে সেই ভিডিয়ো পাঠিয়ে দেন যুবক। ফোন করে জানান, এর পর তো মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না! তিনিই বিয়ে করবেন।

মেয়ের কাছে সব কিছু শোনার পর তাকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের দ্বারস্থ হন মা। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযুক্তদের ধরতে ফাঁদ পাতা হয়। প্রথমে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিয়াগঞ্জ থেকে পাকড়াও হয় চতুর্থ জন। চলে মামলা। সাক্ষ্যগ্রহণের পর দু’বছর আগে তৃতীয়ার দিনে সেই ঘটনায় চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হল এ বছর তৃতীয়ায়। আদালত সূত্রে খবর, সাক্ষ্যগ্রহণের পাশাপাশি ওই ভিডিয়ো পরীক্ষা করেন তদন্তকারীরা। ভিডিয়োতে নির্যাতিতার মুখ দেখা গেলেও অভিযুক্তদের মুখ ঢাকা ছিল। তবে দুই অভিযুক্তের শরীরে থাকা উল্কির মাধ্যমে চিহ্নিত করতে সুবিধা হয় পুলিশের।

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE