এখানেই খুন হন রফিক শেখ। সোমবার চাপড়ায়। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এ তো প্রথম নয়। শেষও নয়। বরং নতুন করে শুরু হল বলা যায়।
চাপড়ায় গোলমাল, বোমাবাজি, খুনোখুনির মূলে রয়েছে ধারাবাহিক অশান্তির বাতাবরণ। এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বেতবেড়িয়া ও ব্রহ্মনগর এলাকায় তৃণমূলের লাগাতার সন্ত্রাসের কথা। এত দিন যার লক্ষ্য ছিল মূলত বিরোধীরা, এখন দলের লোকজনও নিশানা হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, পুলিশের পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্ব যদি শক্ত হাতে হাল না ধরেন, আরও অনেক রক্ত ঝরবে সমগ্র হৃদয়পুর অঞ্চলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেতবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা আশরফ ঘরামি ২০১১ সাল থেকে গোটা হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিজের কব্জায় রেখেছিলেন। বিরোধী দলের লোক তো দূরের কথা, তৃণমূলেরও কেউ তাঁর সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারত না। ২০১৩ সালে স্কুল নির্বাচনের দিন বেতবেড়িয়া গ্রামে খুন হন এক সিপিএম নেতা। সেই রাতেই গ্রামের বেশ কিছু সিপিএম কর্মীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল আশরফের দিকেই। ওই রাত থেকেই শ’খানেক সিপিএম সমর্থক পরিবার গ্রামছাড়া হয়।
আশরফের দাপট এতটাই ছিল যে, ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব ও পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরানোর চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত আশরফের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হন। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে হৃদয়পুর পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে তৃণমূল। বিরোধীরা কোনও প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেনি। ২০১৩-য় আশরফের স্ত্রী আলিয়া বিবি পঞ্চায়েত প্রধান হন। ২০১৮ সালে জিতে হন উপপ্রধান।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, ২০১১ সাল থেকেই আশরফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন বেতবেড়িয়ার, ব্রহ্মনগরের মানুষ। দলের মধ্যেও তাঁর বিরুদ্ধে গোষ্ঠী তৈরি হতে থাকে। কিন্তু তারা কোন ছাড়, দলের উঁচুস্তরের নেতারাও আশরফকে ঘাঁটাতে সাহস পাচ্ছিলেন না। যাঁর হাত ধরে আশরফের এই উত্থান, সেই যুব তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম দলে কোণঠাসা হয়ে গেলেও নিজের এলাকায় আশরফের দাপট কমেনি।
পরিস্থিতিটা পাল্টে যায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থানের পরে। মাস দুয়েক আগে গ্রামছাড়াদের বেশির ভাগ তো বটেই, তৃণমূল কর্মীদেরও একটা বড় অংশ বিজেপিতে যোগ দেন এবং মিছিল করে গ্রামে ঢোকেন। এবং তাঁদের পাল্টা আক্রমনের মুখে পড়ে গ্রামছাড়া হতে হয় আশরফ ও তাঁর অনুগামী পঞ্চায়েত সদস্যদের।
তৃণমূলের ব্লক নেতারা অবশ্য এই বিজেপিতে চলে যাওয়া কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। শেষ পর্যন্ত আশরফ এবং শুকদেবকে দলে জায়গা না দেওয়ার শর্তে দিন কয়েক আগে তাঁরা তৃণমূলে ফেরেন।
আবার আশরফও তার দলবল নিয়ে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে। তাতে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। শুক্রবার রাতেও বেতবেড়িয়া গ্রামে বোমাবাজি হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি।
এই অশান্তি ছড়িয়ে পরে পাশের ব্রহ্মনগর গ্রামে। কারণ বেতবেড়িয়ার পাশাপাশি ওই গ্রামও গোটা হৃদয়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানকার দুই পঞ্চায়েত সদস্য আশরফের অনুগামী। এঁদের এক জন ওহাব শেখ আগেই মারধর খেয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছেন। অন্য জন সফিউদ্দিন শেখ, সোমবার সকালে যাঁর বাড়ির সামনে বোমাবাজিতে রফিক শেখ নিহত হয়েছেন।
তবে সফিউদ্দিন শিবিরের অভিযোগ, বেতবেড়িয়ার আশরফ অনুগামী সদস্যদের আগেই গ্রামছাড়া করা হয়েছে। এ বার বিজেপি থেকে ফেরা লোকজন তাঁকেও এলাকাছাড়া করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে। কয়েক দিন ধরেই ব্রহ্মনগরে রাতে বোমাবাজি হয়েছে। রবিবার রাতেও সফিউদ্দিনের এক অনুগামী জাকির শেখের বাড়িতে বোমা পড়েছে।
এই ব্রহ্মনগর গ্রামেই আবার বাড়ি যুব তৃণমূলের চাপড়া ব্লক সভাপতি রাজীব শেখের আত্মীয় মহসিন শেখের। রাজীবের হাত ধরেই সম্প্রতি বিজেপিতে থেকে তৃণমূলে ফিরেছেন বহু কর্মী-সমর্থক। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, মহসিনের সঙ্গে সফিউদ্দিনের বিবাদের শুরু ছিল হৃদয়পুর এলাকায় একটা জমি কেনা নিয়ে। দুই পক্ষই সেই জমি কিনতে চেয়েছিল। গ্রামের অনেকেরই ধারণা, মহসিনের পিছনে আসলে আছেন রাজীব শেখ।
চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, “কাদের জন্য এলাকায় অশান্তি হচ্ছে তা আমরা দলীয় ভাবে খতিয়ে দেখছি। যারাই করে থাকুক, তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে না। কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy