যৌনপল্লী মুন্সীগঞ্জের পুজোয় মুসলিমদের কাঁধে চড়েই বিসর্জনে যান মা দুর্গা। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর সময়ে একাধিক মণ্ডপে হামলার ঘটনার খবর যখন উদ্বেগ বাড়িয়েছে ভারতে, ঠিক সেই সময়ই দক্ষিণ কলকাতার খিদিরপুরের মুন্সিগঞ্জের যৌনপল্লিতে শারোদৎসবের আয়োজন করে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিচয় দিলেন একদল মুসলিম যুবক। ১৯৪০-এর দশকে যখন মুসলিম লিগ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের দাবি তুলেছে, সেই সময়ই প্রতিবাদস্বরূপ দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন এই এলাকার বাসিন্দারা। সেই ঐতিহ্য এখনও বহন করে চলেছে মুন্সিগঞ্জ ফাইভ স্টার ক্লাব। যদিও ১৯৪৪ সালে যখন এই পুজোটির সূচনা হয়, তখন নির্দিষ্ট কোনও নাম নয় বরং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবেই এই শারোদৎসবের সূচনা হয়েছিল।
ক্লাব কমিটিই পুজোর দায়িত্বে। সেই কমিটির ৮৬ জন সদস্যের মধ্যে ৮৪ জন মুসলমান আর মাত্র দু’জন হিন্দু। ছোটবেলা থেকে বাবা-কাকাদের এই পুজো করতে দেখে এসেছেন তাঁরা। তাই হাজারো আর্থিক সঙ্কটেও পুজো চালিয়ে যেতে চান ফাইভ স্টার ক্লাবের সদস্যরা। সভাপতি মহম্মদ নাজিম, সম্পাদক বলবন্ত সিংহ। কোষাধ্যক্ষ মহম্মদ লাতিফ। কলকাতা বন্দর বিধানসভার অধীন যৌনপল্লির এই পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় নেই। তাই জোটে না বড় চাঁদা, বিজ্ঞাপন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের দাক্ষিণ্য। ৭৮ বছরের এই পুজোর ঐতিহ্য তাই অনেকটাই ম্লান। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনই যেন এ পুজোর প্রাণশক্তি। মহালয়ার পর থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত পুজো কমিটির মুসলিম সদস্যরা কোনও আমিষ আহার করেন না। দশমীর সিঁদুর খেলাতেও অংশ নেন মুসলিম মহিলারাও।
অতিমারি আবহে অর্থের অভাব মেটাতে নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়েই পুজোর আয়োজন করেছেন তাঁরা। তবে গত দু’বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া ৫০ হাজার টাকা আপাতত বল যুগিয়েছে এই পুজোর। ইচ্ছে থাকলেও থিম পুজো না করে সাবেকিয়ানাতেই ভরসা দশভুজার আরাধনায়। এই পুজো চলাকালীন বাংলাদেশে দুর্গা মণ্ডপ ভেঙেছে সে দেশের একদল উত্তেজিত মানুষ। তাদের পরিচয়ও অজানা নয় ফাইভ স্টার ক্লাবের মুসলিম সদস্যদের। তাতে নজর দিতেই চান না তাঁরা। সভাপতি নাজিম বলেন, ‘‘ওখানে যা হয়েছে, তা সেই রাষ্ট্রের ব্যাপার। আমরা সেখানে নজর দিতে চাই না। আমরা আমাদের পুজো নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। ওদের কথা ওদের রাষ্ট্র ভাবছে। আমাদের মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।’’ পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য বিকাশ রায় বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কেন, কোনও ঘটনাই আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বা পুজোয় প্রভাব ফেলতে পারবে না। কারণ বছরের পর বছর আমরা কাঁধে করে মণ্ডপে মা দুর্গাকে নিয়ে আসি। আর কাঁধে করে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাই।’’ তাই এ ভাবেই কলকাতার নিষিদ্ধপল্লিতে এমন এক নজিরবিহীন উৎসব গত সাত দশক ধরে হয়ে চলেছে শারোদৎসবের উচ্ছ্বলতা থেকে দূরে, নিভৃতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy