গোটা পুরভোট পর্বে বহরমপুরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছুটে বেড়িয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। লক্ষ্য ছিল নিজের ‘গড়’ যেন রক্ষা পায়। কিন্তু পারলেন না। পারল না কংগ্রেসও। প্রথমবার মুর্শিদাবাদের প্রাণকেন্দ্র বহরমপুর পুরসভার দখল নিল তৃণমূল।
শুধু জয় পাওয়াই নয়, ২৮টি আসনের পুরসভায় ঘাসফুলের দখলে ২২টি ওয়ার্ড। অধীরের ‘অস্বস্তি’ আরও বাড়িয়ে তাঁর পাড়া ২ নম্বর ওয়ার্ডেও জয়ী তৃণমূল। এমন ফলাফলের পরে কটাক্ষের সুরে অধীরের মন্তব্য, ‘‘২৮টা আসনেই জয় পেতে পারত তৃণমূল। কংগ্রেসের যে ৬ জন জিতেছেন, তাঁদের সাফল্য অক্সিজেন ছাড়া এভারেস্টে চড়ার সমান।’’
গত পুরভোটে বহরমপুরে ২৬টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছিল মাত্র ২টি ওয়ার্ড। এবার ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। কংগ্রেস পেয়েছে ৬টি ওয়ার্ড। বাকি সব তৃণমূলের। বিজেপি এবং বামেরা শূন্য। শুধু বহরমপুরেই নয়, অধীরের মুর্শিদাবাদে বাকি পুরসভাগুলিও গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। বেলডাঙা, ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, কান্দি, মুর্শিদাবাদ পুরসভা তৃণমূলের। এগুলির কোথাও কোথাও কংগ্রেস একটি ওয়ার্ডেও জিততে পারেনি। তুলনায় ফল ভাল ধুলিয়ানে। ২১টি ওয়ার্ডের পুরসভায় কংগ্রেসের জয় মিলেছে ৭টিতে। আর বেলডাঙা ত্রিশঙ্কু। তবে বেলডাঙাতেও কংগ্রেস কোনও আসন পায়নি। ১৪টি ওয়ার্ডের বেলডাঙায় তৃণমূল জিতেছে ৭টি ওয়ার্ড। বিজেপি ৩টি এবং ‘অন্যান্য’ ৪টি।
ভোটগ্রহণের দিনেও পথে নেমেছিলেন অধীর। বারবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোটের পাশাপাশি তাঁর নিজের চলাফেরায় বাধার অভিযোগ তুলেছিলেন। ভোট অবাধ হয়নি দাবি তুলে বিজেপি-র ডাকা বাংলা বন্ধের যুক্তিকে মেনেও নিয়েছিলেন প্রকাশ্যে। তখন থেকেই যে চিন্তায় ছিলেন অধীর, সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেল বুধবার ফল ঘোষণার পরে।
ইতিহাস বলছে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বহরমপুর বিধানসভা ‘হাত’ছাড়া হয়েছিল। এ বার পুরসভাও ‘হাত’ ছেড়ে দিল। ১৮৭৬ সালে তৈরি হওয়া প্রায় দেড়শো বছরের প্রাচীন পুরসভায় উড়ল ঘাসফুলের পতাকা।