Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Mousuni Island

‘বাইরে চলে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই’

আমপানে একবার তছনছ হয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপ। ইয়াসের জেরে এবার কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ইয়াসে ধূলিসাৎ আশ্রয়। মৌসুনি দ্বীপে।

ইয়াসে ধূলিসাৎ আশ্রয়। মৌসুনি দ্বীপে। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মৌসুনি দ্বীপ (নামখানা) শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৬:২৩
Share: Save:

ইয়াস আসার আগে সাগরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দা আমিনা খাতুন। ঝড়ের পর ফিরে এসে দেখেন, তাঁর মাটির বাড়িটার আর কোনও অস্তিত্বই নেই। এলাকার এক ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেন তিনি। মঙ্গলবার সেই ত্রাণ শিবিরে বসেই আমিনা বলেন, “গোটা বাড়িটাই জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। জিনিসপত্র কিছুই পাইনি। জানি না এর পর কী হবে।” ওই দ্বীপের বাসিন্দা শেখ হাবিবুরের মাটির ঘরটাও একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। শুধু টিকে আছে ঘরের দরজাটা। এ দিন সেই দরজার সামনে দাঁড়িয়েই হাবিবুর বলেন, “ঝড়ের সময় ঘরেই ছিলাম। জল আসার আগে শেষ মুহূর্তে কোনও রকমে বেরিয়ে আসি। চোখের সামনে দেখলাম, খড়কুটোর মতো ধুয়ে গেল বাড়িটা। বাথরুমটা ইটের বলে দাঁড়িয়ে আছে।” হাবিবুরের স্ত্রী সাম্বিয়া বিবি বলেন, “শাড়ি, গামছা, রান্নার জিনিস, সবই ভেসে গিয়েছে। ঝড়ের পর থেকে এক কাপড়ে আছি।”

আমপানে একবার তছনছ হয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপ। ইয়াসের জেরে এবার কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঝড়ের পর স্থলভাগ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল মৌসুনি। ফলে চেষ্টা করেও পৌঁছনো যায়নি। পরে প্রশাসনের লোকজনের যাতায়াত, ত্রাণের জিনিস পত্র পারাপারের জন্য নদীপথে নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার নামখানার পাতিপুনিয়া ঘাট থেকে সেরকমই এক নৌকায় চেপে পৌঁছনো গেল দ্বীপে। গিয়ে দেখা গেল, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা মৌসুনি কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের হিসেবেই নদী ও সমুদ্র মিলিয়ে ১২ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। গোটা দ্বীপটাই কার্যত জলের তলায় চলে যায়। মাটির বাড়ি যা ছিল, তার প্রায় সবই ভেসে গিয়েছে। ইটের বাড়িগুলি ভাঙাচোরা অবস্থায় কোনও রকমে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে কৃষি জমি, মাছের পুকুর। প্রায় বারোশো পান বরজ ভেঙে পড়েছে। অসংখ্য গরু-ছাগল, হাঁস মুরগি তলিয়ে গিয়েছে। প্রায় নব্বইটি ফিশারির
মাছ-চিংড়ি ভেসে গিয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার ডিঙি নৌকাগুলিও। পর্যটকদের জন্য সমুদ্রের ধার বরাবর প্রায় ৫২টি কটেজ ছিল। সেসবই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।

আপাতত দ্বীপের বিভিন্ন এলাকার স্কুল, ফ্লাড শেল্টার, ক্লাব মিলিয়ে বারোটা ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। ঘরহারা মানুষগুলো আপাতত সেখানেই আশ্রয় পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার উঁচু জায়গায় তাঁবু করে আছেন। কেউ রাত কাটাচ্ছেন নৌকায়। প্রশাসনের তরফে শিবিরগুলিতে খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে। তবে পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, গতবছর আমপানেও ক্ষতি হয়েছিল দ্বীপের। তবে এ ভাবে সর্বস্ব ভেসে যায়নি। কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবেই পাচ্ছেন না স্থানীয় মানুষ। শেখ আজাদ বলেন, “চাষের জমি জলের তলায়। বাড়িটাও গিয়েছে। এরপর কী করব, কোথায় যাব, জানি না।”

আয়লা-আমপানের পর এই দ্বীপ এলাকা থেকে শ’য়ে শ’য়ে যুবক ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় কাজের খোঁজে। লকডাউনে তাঁদের অনেকে ফিরে এসেছিলেন। দ্বীপের একত্রিশ হাজার বাসিন্দার মধ্যে এখনও বহু মানুষই বাইরে। যাঁরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দ্বীপের যা পরিস্থিতি পেট চালাতে ফের বাইরে পাড়ি দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। শেখ আজিদুর বলেন, “সবই তো গিয়েছে। এরপর আর এখানে থেকে কী হবে! ভাঙা ঘরটা মেরামত করার টাকাও নেই। এখন চারদিকে সব বন্ধ। একটু স্বাভাবিক হলে ফের বাইরে চলে যেতে হবে। না হলে পেট চলবে না।”

এলাকার অবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত দফতরে। এলাকা ঘুরে গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরাও। পঞ্চায়েত প্রধান হাসনাবানু বিবি বলেন, “প্রশাসন মানুষের পাশে আছে। সমস্ত ত্রাণ শিবিরে খাবার দেওয়া হচ্ছে। জল পাঠানো হচ্ছে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা ঘুরে গিয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যেই বাঁধের কাজ শুরু হবে।” বঙ্কিম হাজরা বলেন, “ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে, তা দুয়ারে ত্রাণ প্রকল্পের মাধ্যমে সমাধান করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Mousuni Island Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy