মেডিকেল ডাক্তার এবং নার্স ফোরাম এর উদ্যোগে সিবিআইয়ের হতাশজনক চার্জশিটের প্রতিবাদে সল্টলেকে করুণাময়ী থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত অভিযানফটো স্নেহাশীষ ভট্টাচার্য
সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি। মেয়ের মৃত্যুর যন্ত্রণা আর ষষ্ঠীর বোধনের স্মৃতি কুরে কুরে খেয়েছে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাকে। ভোরের আলোয় নিজেই নিজেকে বলেছেন, ‘৯ আর নয়’। দুর্গাপুজো শুরুর দিনে সব মায়ের কাছে এই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে পথের ধারে ধর্না মঞ্চে এসে বসেছেন। নিজের হাতে প্রদীপ জ্বালিয়েছেন। মেয়ের নিষ্ঠুর হত্যার সত্য উদ্ঘাটন হবে, প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পাবে— এই আশায় সকাল থেকে উপোস করে পথের ধারেই তিনি বসে থেকেছেন রাত পর্যন্ত।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনার দু’মাস হয়ে গেল ষষ্ঠীর সকালে। ৯ অগস্ট সকালে নির্যাতিতার মা ও বাবার কাছে দুঃসংবাদ এসে পৌঁছেছিল। তার পর থেকে সত্য উদ্ঘাটন আর বিচারের দাবিতে অস্থির রাজ্য। দিন গড়িয়ে ফের সেই ৯ তারিখ। পুজো শুরু হয়েছে। উৎসবে ফেরা,আর না-ফেরা নিয়ে টানাপড়েনও চলছে। চিকিৎসকদের অনশন-ধর্না, গণইস্তফা, সাধারণ মানুষের নানা ভাবে প্রতিবাদের মাঝে বাড়ির কাছে সাদা-কালো ধর্না মঞ্চে পঞ্চমী থেকেই বসছেন নিহত চিকিৎসকের পরিবার-পরিজন। পরিবারের বাইরের অনেকেই শামিল হয়েছেন মঞ্চের নীচে বসার জায়গায়। সাদা কালিতে লেখা ব্যানার: ‘স্মৃতি ভারে মোরা পড়ে আছি, ভারমুক্ত, সে এখানে নেই’।
বাড়ির কাছেই সর্বজনীন পুজোর এ বার ৯৬ বছর। মাইকের আওয়াজে রাশ টেনে পুজো হচ্ছে নিয়মমাফিক। মানুষের ঢল নেই মণ্ডপে। পাড়া-প্রতিবেশীরা বলছেন, “ধর্না মঞ্চে বসে থাকা ওই মায়ের চোখের সামনে দিয়ে মণ্ডপ, প্রতিমা দেখতে যাওয়ার মতো মন কারও নেই। বাইরে থেকেও যাঁরা আসছেন, থমকে যাচ্ছেন পথের ধারে প্রদীপ জ্বালানো ধর্না মঞ্চের সামনে এসে। মেয়ের মৃত্যুর পিছনে থাকা সত্য ঘটনা জানার জন্য মাকে ধর্নায় বসতে হয়, এ কোন সুস্থ সমাজ!”
ধর্না মঞ্চে অনেকে এসেছেন দেখা করতে। এ দিন সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও এসেছিলেন। মঙ্গলবার বিজেপির কৌস্তভ বাগচী, সজল ঘোষেরাও আসেন। সবাই বলেছেন, “শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধর্নায় বসতে হল, এটা রাজ্যের লজ্জা।”
আর যে-মা একমাত্র সন্তানের ইচ্ছেয় প্রতি বছর এই দিনে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেন, সারা বাড়ি আলপনায় আর আলোর মালায় সাজত, তিনি বলছেন, “একটা ৯ তারিখ আমাদের জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে। ষষ্ঠীর দিন দুর্গা প্রতিমা সাজাতাম, মা-মেয়েতে মিলে। দু’জনেই উপোস করতাম। আরামবাগ থেকে পুরোহিত আসতেন। দশমী পর্যন্ত দম ফেলার সময় থাকত না। আমার দুর্গা বোধনের আগেই বিসর্জন হয়ে গেল।”
চোখের জল বাধ মানে না বৃদ্ধার। জোড় হাতে বলে চলেন, “এক মেয়েকে হারিয়ে হাজার হাজার ছেলেমেয়েকে পেয়েছি। তারা অনশন করছে। আমিও উপোস করেছি। বাড়িতে আর পুজো হবে না। তাই এখানেই প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে আছি।” তাঁর কথায়, “রক্তাক্ত হৃদয়ে আমরা আলোর পথযাত্রী।” তাঁর এখন শুধু চাওয়া, “পৃথিবীর সমস্ত অসুর দমন হয়ে স্বাভাবিক হোক, শান্ত হোক পরিবেশ। বোধনের সন্ধ্যায় মা দুর্গার কাছে এটাই মিনতি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy