—ফাইল চিত্র।
একদা সংস্থাটি ছিল। ছিল তাদের কার্যক্রম সংক্রান্ত আইনও। প্রায় দু’বছর হল, সেই সংস্থা নেই। তাদের আইনটিও লুপ্ত। অথচ সেই আইনের ফাঁসে আটকে গিয়েছে ২৫০ প্রকল্প!
কলকাতা পুরসভার এক থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণকাজের জন্য কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (কেআইটি) থেকে অবজার্ভেশন সার্টিফিকেট বা ছাড়পত্র নেওয়ার কথা। অথচ ২০১৭ থেকে কেআইটি-র অস্তিত্বই নেই! তা হলে কেআইটি-র হয়ে ছাড়পত্র দেবেন কে? এই নিয়ে পুর প্রশাসনের দীর্ঘসূত্রতায় আটকে গিয়েছে অন্তত ২৫০টি বাণিজ্যিক ও আবাসন প্রকল্প। পুর দফতর নতুন নীতি নির্ধারণে নেমেছে বটে, কিন্তু কী ভাবে সুরাহার পথ মেলেনি।
কলকাতার এক থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডের পরিকাঠামো, নাগরিক পরিষেবা সুষ্ঠু ভাবে দেওয়ার জন্য ১৯১১ সালে তৈরি হয় ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (সিআইটি)। মহানগরীর যে-অংশ নতুন করে গড়ে উঠছিল, সিআইটি সেখানে পরিষেবার মূল দায়িত্ব পেয়েছিল। পরবর্তী কালে মহানগরীর নাম ‘ক্যালকাটা’ থেকে হয় ‘কলকাতা’। নাম বদলে সিআইটি হয় কেআইটি। এর মধ্যেই কলকাতা ও শহরতলির নগরায়ণের কাজ একসঙ্গে দেখভালের জন্য সরকার তৈরি করে কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ। তার পরে ধীরে ধীরে কেআইটি-র গুরুত্ব কমতে থাকে। এখনও কেআইটি-র হাতে শহরের বেশ কয়েকটি আবাসন, রাস্তা, পার্ক, সেতু বা বাজার রয়েছে। গুরুত্ব কমতে থাকায় ২০১৭ সালে কেআইটি-কে কেএমডিএ-র সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। কেআইটি আইনটি ২০১৭-র ৩১ মার্চ বাতিল করে দেয় সরকার।
নতুন বিপত্তি তার পরেই। কারণ, ১৯১১-র আইনের ৬৩ ধারায় বলা ছিল, কলকাতার ১ থেকে ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণকাজ করতে হলে কেআইটি-র সার্টিফিকেট বা ছাড়পত্র আনতে হবে। সাইট প্ল্যানের সঙ্গে সেটি কলকাতা পুরসভায় জমা দিলে তবেই বাড়ি, আবাসন বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নকশা অনুমোদন করা হবে। কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বাই-ল-তে তেমনটাই বলা আছে।
এখন কেআইটি নেই। তা মিশে গিয়েছে কেএমডিএ-র সঙ্গে। সংশ্লিষ্ট আইনটিও লুপ্ত। কিন্তু কলকাতা পুরসভার বাই-ল-তে কেআইটি-র ছাড়পত্র আনার কথা থেকে গিয়েছে! ফলে নকশা অনুমোদনের আবেদন জমা দিলেই কেআইটি-র অবজার্ভেশন সার্টিফিকেট আনার নির্দেশ দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। আবেদনকারীরা ছুটছেন কেএমডিএ-র কাছে। মাঝখানে কেএমডিএ-র হাউসিং সেক্টরের মুখ্য বাস্তুকার সেই ছাড়পত্র দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কেএমডিএ-র অন্দরের প্রশ্ন, যে-সংস্থা নেই, তার হয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হবে কেন?
কেএমডিএ-র খবর, ১৩১টি আবেদন এখন ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। আরও ১০০ আবেদন জমা পড়েছে। কিন্তু তা নিয়ে কী ভাবে এগোনো হবে, বুঝতে পারছেন না কর্তারা। এক কর্তার কথায়, ‘‘এই ছাড়পত্র দিয়েই বছরে ৬০-৭০ লক্ষ টাকা রোজগার হয়। ফলে সেটাও ছাড়া মুশকিল।’’ অনেকের প্রশ্ন, যে-সংস্থা এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন নেই, সেই সংস্থার নামে ছাড়পত্র দিতে সরকার কেন নির্মাণকারীদের থেকে টাকা আদায় করবে? এখনই এই ব্যবস্থা প্রত্যাহার করা উচিত। কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেছেন, ‘‘পুর দফতর এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে আমরা বাই-ল পরিবর্তন করব।’’ যদিও কেএমডিএ-র কর্তাদের বক্তব্য, সাবেক কেআইটি-র প্রচুর সম্পত্তি, রাস্তা, পার্ক, আবাসন রয়েছে। সেগুলি দখল করে কেউ নির্মাণকাজ চালাচ্ছে কি না, সেটা দেখা দরকার। ফলে এখন কেএমডিএ যাতে ছাড়পত্র দেয়, সেই অনুযায়ী পুর বিধি সংশোধন করতে হবে। সেই সংশোধনের আগে পর্যন্ত প্রায় ২৫০ আবেদনকারীকে অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন কেএমডিএ-কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy