বর্ষার ট্রেন দেরিতে চলছে। সময় পেরিয়ে গেলেও সে ভারত-ভূমিতে পা রাখেনি। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দেশের বিরাট তল্লাট শুকিয়ে কাঠ। বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ‘বিপজ্জনক’ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে বলে রবিবার জানাল দিল্লির মৌসম ভবন। ঘাটতি-বিচারে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বও খুব একটা পিছিয়ে নেই।
এরই মধ্যে আশার কথা— কেরলে বর্ষা আগমনের অনুকূল পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। মৌসম ভবন জানাচ্ছে, কেরল-সহ দক্ষিণ ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে প্রাক্-বর্ষার বৃষ্টি। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। যদিও আবহবিদেরা একে ‘প্রাক্-বর্ষা’ তকমা দিতে নারাজ। তাঁদের মতে, এর মূলে রয়েছে স্থানীয় ভাবে তৈরি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ। মৌসম ভবন এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা কবে আসবে।
মরসুমি ক্যালেন্ডার মোতাবেক, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কেরল হয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করে ১ জুন। গত বেশ ক’বছর ধরে নানা কারণে সেই নির্ঘণ্ট ব্যাহত হচ্ছে। এ বার যেমন বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র বাধায় বর্ষার গতি হোঁচট খেয়েছে, আরবসাগরের পথে কেরলে পৌঁছতে সে দেরি করে ফেলেছে। এ দিন মৌসম ভবনের পূর্বাভাস: আর দিন তিনেকের মধ্যে কেরল দিয়ে বর্ষা মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকবে। তার পরে উপরের দিকে উঠে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার পালা। বায়ুপ্রবাহ যত অনুকূল থাকবে, মৌসুমি বায়ুর শাখা বিস্তারের প্রক্রিয়া তত মসৃণ হবে।
এবং পরিস্থিতি ঠিকঠাক থাকলে ১৫-১৬ জুনের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষার পদার্পণ ঘটবে বলে আবহবিদদের ধারণা। ওঁরা জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক নিয়মে দিল্লিতে বর্ষা ঢোকার কথা ১ জুলাই। কিন্তু এ বার বর্ষা-গাড়ি উত্তর-পশ্চিম ভারতে পৌঁছতে পৌঁছতে জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ গড়িয়ে যেতে পারে।
তত দিন রাজস্থান, গুজরাত, পঞ্জাব, হরিয়ানাকেও জ্বলে-পুড়ে খাক হতে হবে। তাপপ্রবাহের প্রকোপে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টির ঘাটতি ৮১% ছুঁয়ে ফেলেছে। দক্ষিণ উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাত, বিদর্ভে আগামী কয়েক দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা। অসমে ইতিমধ্যে এক বার বন্যা হয়ে গেলেও পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বৃষ্টির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭১%। মধ্য ভারতে ৩৯%। পূর্ব ভারতের কিছু অংশে ও উত্তর-পশ্চিমে ভূগর্ভস্থ জলস্তরও নামছে লাফিয়ে লাফিয়ে। উপরন্তু জলাধারগুলো খটখটে। এমতাবস্থায় অতিবৃষ্টিই একমাত্র সুরাহা। অথচ তাতে উল্টো বিপত্তির সমূহ সম্ভাবনা। কারণ, টানা অনাবৃষ্টির জেরে উত্তর-পশ্চিম ও মধ্য ভারতে বিভিন্ন নদীর তল অনেকটা উঠে এসেছে। অতিবর্ষণ হলে সেখানে বৃষ্টির ঘাটতি মিটবে বটে, কিন্তু বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আবহবিদদের পর্যবেক্ষণ। এ হেন ‘তপ্ত’ পরিবেশে দক্ষিণ ভারত যেন ‘মরূদ্যান।’ রোয়ানুর দৌলতে সেখানে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের ৬৩% বেশি। আর তারই সুবাদে সারা দেশে বৃষ্টির গড় ঘাটতি আপাতত ৩২%।
কিন্তু গড়ের এই অঙ্কে যে সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতিফলন নেই, প্রকৃতির দিকে তাকালেই তা মালুম হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy