মুকুল রায়। ফাইল চিত্র।
কয়েক দিন আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তাঁর যোগ দেওয়া নিয়ে বিজেপির বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। ক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, প্রয়োজনে মনিরুল বিজেপি থেকে ইস্তফা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন মুকুল রায়। বিজেপি নেতৃত্ব বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে সোমবার জানিয়েছেন তিনি।
মুকুল রায় নিজেই যাঁকে দলে নিয়ে এসেছিলেন, সেই মনিরুলের ইস্তফা দেওয়া প্রসঙ্গে তাঁকে মুখ খুলতে হল? বিজেপি সূত্রে খবর এ ক’দিন ধরে দল এবং সঙ্ঘের অন্দরে মনিরুলকে নিয়ে এতটাই ঝড় বয়ে গিয়েছে যে মুকুলকে ব্যাকফুটে গিয়ে তাঁর ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে আনতে হয়েছে। সঙ্ঘ বা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব শুধু অসন্তুষ্ট নন, বীরভূমের জেলা বিজেপিতেও প্রচণ্ড অসন্তোষ বলে খবর।
কী কারণে এই ক্ষোভ? বীরভূমে মনিরুল ইসলাম-অনুব্রত মণ্ডলদের বিরুদ্ধেই বিজেপির লড়াই। সেই মনিরুলই যদি বিজেপিতে চলে আসেন, তা হলে গোটা লড়াইটা তো অর্থহীন হয়ে পড়ে। এমনটাই বিজেপির কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্ক্ষীদের মত। বীরভূমে জেলা বিজেপির সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় তো প্রকাশ্যেই নিজের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়: ‘‘আমরা সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মনিরুল ইসলামকে আমরা মেনে নেব না। মনিরুলকে দলে নেওয়ার আগে আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলা হয়নি। কাউকে জানতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।’’ রামকৃষ্ণের আরও দাবি, তাঁরা এই সিদ্ধান্তের কথা মৌখিক এবং লিখিত ভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েছেন। রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত যেন তাঁদের অনুকূলেই হয়, এমনটাই রামকৃষ্ণেরা চাইছেন।
বিজেপি সূত্রের খবর, দলের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বা সঞ্জয় সিংহরাও মনিরুলকে দলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে মোটেও খুশি ছিলেন না। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষও এ বিষয়ে তাঁর অসন্তোষের কথা সম্প্রতি একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দেন। মনিরুল প্রসঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘অনেক বিরোধিতা আছে। বিরোধিতা আমারও আছে। গণতন্ত্রের খেল। হজম করতে হচ্ছে।’’ দিলীপের ‘আমারও বিরোধিতা আছে’ এবং ‘হজম করতে হচ্ছে’ জাতীয় বাক্যই বুঝিয়ে দিয়েছিল তিনি বিষয়টা পছন্দ করছেন না।
২৯ মে মনিরুলের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সেই ছবি। —ফাইল চিত্র।
খুশি হয়নি সঙ্ঘও। এর আগে বিজেপিতে যাঁদের যোগদান করানো হয়েছে, তাঁদের অনেককে নিয়ে সঙ্ঘ অসন্তুষ্ট ছিল। কিন্তু আপত্তি করেনি। তবে মনিরুলের ঘটনায় এতটাই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে যে, এর পর এই স্তরের কাউকে দলে নিতে হলে সঙ্ঘের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে— মুকুল রায় এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে এই বার্তা দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর। এই বার্তার পর কার্যত অনেকটাই চাপ বেড়ে গিয়েছিল ওই দু’জনের উপরে। সেই কারণে মুকুলকে প্রকাশ্যে সোমবার মুখ খুলতে হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘ইভিএম হঠাও, ব্যালট ফেরাও’, দলকে জাগাতে নতুন আহ্বান মমতার
সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিষয়আশয় নিয়ে সঙ্ঘের তরফে প্রকাশ্যে সে ভাবে বিবৃতি দেওয়া হয় না। কিন্তু মনিরুল ইসলামের বিজেপিতে আগমণ নিয়ে সঙ্ঘ এতটাই বিরক্ত যে, সে বিরক্তির কথা ঘুর পথে প্রকাশ্যে আনা হয়। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হাওড়া কেন্দ্রের যিনি প্রার্থী ছিলেন, সেই রন্তিদেব সেনগুপ্ত সঙ্ঘের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। সম্প্রতি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটান। গত ২৯ মে, যে দিন মনিরুল দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দেন, সে দিনই রন্তিদেব ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘অনুপম হাজরার হাত ধরে মনিরুল ইসলাম প্রবেশ করলেন বিজেপিতে। এতে বিজেপির কতখানি লাভ হল বা হবে তা আমি জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি বীরভূম জেলাটির সঙ্গে আমার সামান্য একটু যোগাযোগ আছে। মনিরুলদের তাণ্ডবের প্রতিবাদেই ওই জেলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। এখন বিজেপি সম্পর্কে তাদের কী ধারণা হবে?’’ এখানেই থেমে থাকেননি রন্তিদেব। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই অনুপম হাজরা নামক লোকটি ঠিক কী করতে বিজেপিতে ঢুকেছে? ভোটের সময় এই লোকটি অনুব্রত মণ্ডলের গলা জড়িয়ে ধরল। ভোট মিটতে মুনমুন সেনের সঙ্গে ছবি। অবশেষে মনিরুল ইসলামকে সাদরে বিজেপিতে ডেকে আনা। আর কী কী করতে চাইছে অনুপম?’’
আরও পড়ুন: রদবদলের মুখে রাজ্য বিজেপি, দেবশ্রী-লকেটকে অব্যাহতির সম্ভাবনা, উত্তরসূরি নিয়ে জল্পনা
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, অনুপমের নাম করলেও রন্তিদেব ইচ্ছাকৃত ভাবেই উহ্য রেখেছেন মুকুল রায়ের নাম। কারণ, মুকুল দলের পদাধিকারী। জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য। তাই রন্তিদেব তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু বার্তা স্পষ্ট। রাজ্য বিজেপির অনেকেই মনে করছেন, রন্তিদেবের ওই ফেসবুক পোস্ট শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে নয়, সঙ্ঘের ইশারাতেই ওই পোস্ট বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। ওই অংশটির মতে, প্রকাশ্যে কেউ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলুক বা না খুলুক, মুকুল যে যথেষ্ট প্যাঁচে, সেটা প্রবল ভাবে স্পষ্ট। তাই মনিরুল প্রসঙ্গে যখন সোমবার মুকুল বলেন, ‘‘মনিরুল ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, দলই বিচার করে সিদ্ধান্ত নেবে,’’ তখন সেটা মুকুলের পিছু হঠারই লক্ষণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy