Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

চা নিয়ে স্পর্শকাতর মোদীও, মত মন্ত্রীর

আশা, সংশয়, ক্ষোভ, বির্তকের মধ্য দিয়েই প্রথম দিনের সফর কাটল কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের। রবিবার সকাল সাড়ে বারোটা নাগাদ বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখান থেকে ডুয়ার্সের বন্ধ বান্দাপানি এবং বীরপাড়া চা বাগানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন।

বান্দাপানি বাগানে বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে সীতারমন।— নিজস্ব চিত্র।

বান্দাপানি বাগানে বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে সীতারমন।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:৩৫
Share: Save:

আশা, সংশয়, ক্ষোভ, বির্তকের মধ্য দিয়েই প্রথম দিনের সফর কাটল কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের।

রবিবার সকাল সাড়ে বারোটা নাগাদ বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখান থেকে ডুয়ার্সের বন্ধ বান্দাপানি এবং বীরপাড়া চা বাগানে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। বান্দাপানির শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনে দ্রুত বাগান খোলার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। আইনি জটিলতা না থাকলে উত্তরবঙ্গের সব বন্ধ চা বাগান খুলতে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আশ্বাসে বন্ধ চা বাগানে আশার সঞ্চার হলেও, কিছুটা দূরের বীরপাড়া চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। মাস ছ’য়েক আগে বন্ধ রেডব্যাঙ্ক চা বাগান পরিদর্শনের প্রসঙ্গ তুলে সরাসরি মন্ত্রীকে ওই শ্রমিক প্রশ্ন করেন, ‘‘এখনও রেডব্যাঙ্ক চা বাগান খোলেনি। কী করে বিশ্বাস রাখব।’’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে পরিদর্শনে জিটিএ-এর চিফ তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ উপস্থিত থাকায় তা নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠসূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, গুরুঙ্গকে পরিদর্শনের সময় উপস্থিত থাকতে বলা হয়নি। তিনি নিজেই এসেছিলেন। বীরপাড়া চা বাগানে গিয়ে গুরুঙ্গ বন্ধ চা বাগান নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘ভোটের রাজনীতি’ করার অভিযোগও তুলেছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে গিয়ে রাজনীতির অভিযোগ তোলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনগুলি। যদিও, এ দিন বাগডোগরা বিমানবন্দরে নামার পর থেকে একাধিকবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজ্যের সঙ্গে যৌথভাবে পদক্ষেপের কথাই জানিয়েছেন। রাজ্যের সহযোগিতাও চেয়েছেন। আজ, সোমবার শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে বন্ধ বাগান নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠক করবেন নির্মলা সীতারামণ। রাজ্যের তরফে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রবিবার সন্ধ্যায় পার্থবাবু বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা জানিয়েছেন।

বীরপাড়া থানা এলাকার দু’ই বন্ধ চা বাগানে গিয়েই শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনতে হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। বান্দাপানি চা বাগানে পানীয় জল সংগ্রহ থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়া সব নিয়েই মন্ত্রীর কাছে ক্ষোভ উগরে দেন চা বাগানের শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অভাব-অভিযোগের কথা শোনার মাঝে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। কেউ বলেছেন, ‘‘আমাদের ভুটান থেকে জল আনতে হয়,’’ কেউ অভিযোগ করেন, ‘‘স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা হয় না।’’ বাগানে ঢোকার রাস্তার কথা জানিয়ে এক শ্রমিক মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘ম্যাডাম, বাগানের কোনও রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। আপনি নিজেই তো দেখলেন রাস্তার অবস্থা কেমন।’’ বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের রাজ্যের তরফে দেড় হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়া হয়। এক শ্রমিক মন্ত্রীকে বলেন, ‘‘অনুদানের ভিক্ষে নিতে চাই না। আমাদের বাগান খুলে দিন।’’ বান্দাপানির পরে বীরপাড়া চা বাগানে গিয়েছেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

তবে বন্ধ বাগান নিয়ে রাজ্যের কোনও চাপানউতরে না গিয়ে কেন্দ্র যৌথভাবে বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যা মেটাতে চায় বলেই এ দিন দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বন্ধ বাগান নিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্য সরকারের প্রধানমন্ত্রী চিঠি পাঠানোর প্রসঙ্গও জানিয়েছেন তিনি। বান্দাপানি বাগানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্ধ বাগানের সমস্যার কথা জানিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্য সরকারের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একসময় চা বিক্রি করতেন। উনি এই বিষয়ে যথেষ্ট স্পর্শকাতর। বন্ধ বাগানের শ্রমিক মৃত্যু নিয়ে নানা অভিয়োগ শুনেছি, কোনটা সত্যি তা জানি না।’’

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহযোগিতার কথা বললেও, এ দিন বান্দাপানি চা বাগানে মন্ত্রীর সঙ্গে নিয়ে জিটিএ-চিফ গুরুঙ্গ অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বন্ধ বাগান নিয়ে রাজ্য সরকার ভোটের রাজনীতি করছে। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিলাম। এবার আশা করছি বাগান খুলবে।’’ তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অলোক চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, ‘‘রাজনীতি করতেই গুরুঙ্গ বন্ধ বাগানে গিয়েছিলেন। এর বেশি কোনও মন্তব্য এখন করব না।’’

রবিবাবার বিকালে তিন বছর ধরে বন্ধ ডুয়র্সের বীরপাড়া থানা এলাকার বান্দাপানি ও আট মাস ধরে পরিত্যক্ত ডানকান গোষ্ঠীর বীরপাড়া চা বাগানের শ্রমিকেরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে একই সুরে জানিয়ে দেন, সরকারি অনুদানের টাকা আয় তাঁরা দিন গুজরান করতে রাজি নন, বাগান চালু করলে তারা চা বাগানে খেটে উপার্জন করতে চান।

নির্মলাদেবী এর পরে আশ্বাস দেন, ‘‘আজ সোমবার ট্রেড ইউনিয়ন এবং মালিক ও সরকারের সঙ্গে কথা বলে বাগান চালু করার সব রকম চেষ্টা চালাব। আদালতের বিচারাধীন না হলে আমরা বাগান চালু করব।’’

সাত মাস আগে নির্মলা দেবী রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে যান। সে সময় তিনি বাগান চালু করার জন্য কেন্দ্রে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়ে আসেন। এদিন ফের বাগান চালু করার জন্য চেষ্টা করার কথা জানালে শ্রমিকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়। বীরপাড়া চা বাগানের শ্রমিক রবিনসন কুজুর মন্ত্রীর মুখোমুখী হয়ে বলতে থাকেন, সাত মাস আগে তো আপনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবার একই কথা বলছেন।

তবে বিষয়টি নিয়ে নির্মলাদেবী কোন জবাব না দিলেও দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরিন্দ্র সিংহ আলুআলিয়া, মন্ত্রীর উপর ভরসা রাখার জন্য বলেন।

বান্দাপানি বাগানের শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, ‘‘বাগান থেকে বীরপাড়ার দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের উপযুক্ত নয়। মানুষ এখানে খেতে পাচ্ছে না। বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন। বাগানে জল নেই বহু মানুষ ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে। বাগানের শ্রমিক পুষ্পা মঙ্গর বলতে থাকেন, আমাদের কথা কেউ ভাবে না। আমরা আর অনুদানে বাঁচতে চাইছি না। আপনি বাগান খুলে দিন।’’ বাগানের অপর শ্রমিক রমেশ ওঁরাও বলেন, ‘‘ভুটান থেকে আসা নোংরা জল খেয়ে বেঁচে আছি আমরা। ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা ছেড়ে পাথর ভাঙছে। চিকিৎসা নেই, খাবার নেই এই অবস্থা আর কত দিন চলবে!’’

মোর্চা সুপ্রিমো বিমল গুরুঙ্গ বলেছেন, এখানকার ১৮ টি বাগান নিয়ে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করার কধা বলেছি। রাজ্য ভোটের রাজনীতি করছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy