মালদহে ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন রাস্তা। তা দিয়েই চলছে ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। ছবি: পিটিআই।
পূর্বাভাস ছিল। সেই মতো রবিবার রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় কোনও জেলাই বৃষ্টি থেকে রেহাই পেল না। ধাক্কা খেল ছুটির দিনের পুজোর বাজার। মন খারাপ বঙ্গবাসীর। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। তার মধ্যে বৃষ্টির জল জমে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে ডেঙ্গির। এমনিতেই ডেঙ্গির গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তার মধ্যে এই বৃষ্টির জল জমে থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে পারে অনেকটাই। বৃষ্টিতে কোথাও ভেঙেছে বাঁধ। ঘরছাড়া বহু মানুষ। জলমগ্ন চাষের জমি। কোথাও ধস নেমে বন্ধ যান চলাচল। উত্তরের জেলাগুলিতে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে কয়েকটি নদীর জল।
ঝাড়খণ্ডের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপ শক্তি হারিয়ে ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হয়েছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, পশ্চিম ঝাড়খণ্ডে অবস্থানকারী ঘূর্ণাবর্তে জলীয় বাষ্পের জোগান যথেষ্ট থাকায় এখনও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বেশ কয়েকটি জেলায়। রবিবার সকাল থেকেই কলকাতায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘলা আকাশ। আশপাশের জেলাতেও পরিস্থিতি একই। হাওড়ায় রবিবার মেঘলা আকাশ। রাতে ও ভোরের দিকে বৃষ্টি হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি কমেছে। বাতাসে ঠান্ডা আমেজ।
বাঁকুড়ায় বৃষ্টি কিছুটা ধরলেও আকাশ মেঘলাই থাকল। রবিবার নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশ নদীতেই নামতে শুরু করেছে জলস্তর। গন্ধেশ্বরী নদীর উপর থাকা মানকানালি সেতু থেকেও নেমে গিয়েছে জল। শনিবার বিকেল থেকেই ওই সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়েছে। জল নেমেছে মেজিয়ার কাছে দামোদরের স্থানীয় শাখা নদীর উপর থাকা রামচন্দ্রপুর সেতুতেও। শনিবার জলমগ্ন এই সেতু পেরোতে গিয়ে স্রোতে ভেসে গিয়েছে একটি ট্রাক্টর।
হাওয়া অফিস জানিয়েছে, নদিয়ার উত্তর অংশে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। জেলা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির আশপাশে থাকবে বলে জানা গেছে।
এ দিকে লাগাতার বৃষ্টিতে বীরভূমের নলহাটি-২ নম্বর ব্লকের শীতলগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের বেড়াশিমুল গ্রামের কাছে ব্রাহ্মণী নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। সেই ফাটল দিয়ে জল ঢুকে ভেঙে গিয়েছে বাঁধ। নদীবাঁধ ভেঙ্গে পড়ায় বেড়াশিমুল, প্রসাদপুর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করে। ডুবে যায় কৃষি জমি। শনিবার রাতেই গ্রামবাসীরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়।
মুর্শিদাবাদের ঝাড়খন্ড লাগোয়া অংশে বেশ কয়েকটি জায়গায় রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গোটা জেলা জুড়ে সকাল থেকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে হালকা বৃষ্টি চলছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৮৫ শতাংশ। আগামী মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমতে পারে।
অবিরাম বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গও। মালদহে বৃষ্টির কারণে জনজীবন এক প্রকার বিপর্যস্ত। ইংরেজবাজার পুর এলাকার একাধিক ওয়ার্ড জলমগ্ন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জলমগ্ন। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকেছে জল। উত্তরের বাকি পাঁচ জেলাও লাগাতার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত। শনিবার শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তার জেরে রম্ভী থানার অন্তর্গত লোহাপুলের কাছে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে ধস নামে। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এর ফলে সিকিমে ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। তিস্তা থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে কার্শিয়াং হয়ে যেতে হচ্ছে। শনিবার থেকে ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কোচবিহারও। দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রধান তিন নদী টাঙ্গন, আত্রেয়ী, পুনর্ভবার জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। টাঙ্গন নদীর জলে কুসমুণ্ডি ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় জল ঢুকেছে। গঙ্গারামপুরের পুনর্ভবা নদীর বাঁধের কিছু অংশ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০০টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy