হাসি-কান্না: অনশন তুলে নেওয়ার পরে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীরা। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
গত কয়েক দিন ধরেই বাড়িতে মন পড়ে ছিল তরুণীর। বৃহস্পতিবার তাঁর তিন বছরের মেয়ে শ্রীনিকার জন্মদিন। কিন্তু অনশন মঞ্চ ছেড়ে কী ভাবে মেয়ের কাছে যাবেন তিনি? গত ২৮ দিন ধরে মা সৌমি ভট্টাচার্য যে টানা অনশনমঞ্চেই বসেছিলেন।
তবে বৃহস্পতিবার শ্রীনিকার জন্মদিনে মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ হল। সৌমি জানান, বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনশনমঞ্চে আসায় তাঁদের মনে একটু আশার আলো জাগে। ভেবেছিলেন, তাঁদের সমস্যার সমাধান হতেও পারে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর কথায় ভরসা করেই তাঁরা অনশন তুললেন। একগাল হেসে সৌমি এ দিন বলেন, ‘‘আমার এখন খুব আনন্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক দৌড়ে মেয়ের কাছে চলে যাই। আজ মেয়ের জন্মদিন। আজ ওকে দেখতে পাব ভেবে খুবই ভাল লাগছে।’’
শুধু সৌমিই নন, অনশন মঞ্চে ছিলেন আরও কয়েক জন মা। যেমন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়ের টুম্পা পাল বা নরেন্দ্রপুরের প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। টুম্পা বলেন, ‘‘গতকাল থেকেই খবর পেয়েছিলাম মেয়ে অদ্রিজার শরীর খারাপ। ওকে ডাক্তার দেখাতে হবে। তাই গতকাল রাত থেকেই মনটা ছটফট করছিল। আজ বাড়ি ফিরে আগে মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাব।’’ আর এক মা প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনশন চলাকালীন আমার স্বামী কয়েক দিন দেখা করে গিয়েছে। কিন্তু ছেলে প্রায়াংশুকে এখানে আনতে বারণ করেছিলাম। ২৯ দিন পরে ছেলেকে দেখব। এতদিন ছেলেকে না দেখে আগে কখনও থাকিনি।’’
তবে অনশন তুলে নেওয়ায় মন খারাপও হচ্ছে কারও কারও। টুম্পার বান্ধবী স্বাতী কর্মকার যেমন বললেন, ‘‘গত ২৮ দিন সকলে একসঙ্গে মেয়ো রোডের ধারে ফুটপাতে খোলা আকাশের নীচে কাটিয়েছি। অনেকের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কত সুখ-দুঃখের কথা হত। অনশনে না খাওয়ার কষ্ট ছিল ঠিকই। সেই কষ্টের মধ্যেও একটা বন্ধন তৈরি হয়ে গিয়েছিল অনেকের সঙ্গে।’’ এ দিন অনশন ভেঙে যাওয়ার পরে দেখা যায় অনেকেই একে অপরের সঙ্গে ফোন নম্বর আদানপ্রদান করছেন। আনোয়ার আলি নামে এক অনশনকারী বলেন, ‘‘এখানে আসার আগে অনেককেই চিনতাম না। এক জায়গায় দিন কাটাতে কাটাতে পরিচয় হয়েছে। টানা অনশনে আমার শরীর খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। তখন তো এখানে পরিচয় হওয়া অন্য অনশনকারীরাই আমার দেখাশোনা করেছেন। এই দিনগুলি ভুলব কী করে?’’
এই দিনগুলি ভুলতে চান না বলেই এসএসসি চাকরিপ্রার্থী এই অনশনকারীরা তাঁদের মোবাইলে টানা ২৮ দিন অনশনের টুকরো টুকরো বহু ছবি তুলে রেখেছেন। অনশন ভেঙে যাওয়ার পরে তাঁরা এখন সেই সব ছবি মোবাইলে একে অপরের সঙ্গে আদানপ্রদান করছিলেন। এক অনশনকারী বলেন, ‘‘রাতের পর রাত জেগে থাকতাম। প্রচণ্ড মশা ছিল। সেই সঙ্গে ফুটপাতে বড় বড় ইঁদুরও মশারির পাশে ঘুরত। ইঁদুর যদি মশারির ভিতরে ঢুকে কামড়ায়, এই ভয়ে আমরা কয়েক জন ঘুমোতে পারতাম না। সেই সঙ্গে খিদের জ্বালা তো ছিলই।’’ ঝড়-ঝঞ্ঝার রাতে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ত্রিপল উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার কথাও মনে করেন কয়েক জন।
একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে এ রকম টুকরো টুকরো স্মৃতিই বারবার উঠে আসছিল ওঁদের কথায়। যাওয়ার আগে তাই কেউ কেউ নিজস্বী তুললেন একসঙ্গে। কয়েক জনের চোখের কোণে দেখা গেল জল। বিদায় নেওয়ার একে অপরকে মনে করিয়ে গেলেন, তাঁদের লড়াই শেষ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন ওঁরা। প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে আবার দেখা হবে এই পথেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy