Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Mithun Chakraborty

সুকান্ত-সঙ্গী মিঠুন, পঞ্চায়েত প্রস্তুতিতে ‘মহাগুরু’কে মাঠে নামাচ্ছে গেরুয়া শিবির

ভিড় টানতে ওস্তাদ মিঠুন নয়, এ বার সংগঠক মিঠুনকে দেখবে বাংলা। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে রাজ্য সভাপতি সুকান্তের সঙ্গে রাঢ়বঙ্গ চষে ফেলবেন মিঠুন। সভা করবেন অনুব্রতের বোলপুরেও।

পঞ্চায়েতের প্রচারে সংগঠক মিঠুনকে নিয়ে একাধিক সভা করবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

পঞ্চায়েতের প্রচারে সংগঠক মিঠুনকে নিয়ে একাধিক সভা করবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। — ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২২ ১২:৩৫
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও বাংলার গ্রামে গ্রামে ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। সভা, সমিতি চলছে জোরকদমে। পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে কড়া টক্কর দিতে গেরুয়া শিবির মাঠে নামাচ্ছে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে। রাঢ়বঙ্গ ও জঙ্গলমহল জুড়ে ধারাবাহিক ভাবে সভা করবেন ‘মহাগুরু’। সঙ্গে থাকবেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।

২০২১-এর বিধানসভা ভোট এবং উপুর্যপরি উপনির্বাচনে লাগাতার হারের মুখ দেখতে হয়েছে বিজেপিকে। পঞ্চায়েতে ‘খেলা ঘোরানোর’ আশায় মিঠুন-সুকান্ত জুটিকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তার শুরুটা হবে জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া দিয়ে, শেষ অনুব্রতের ডেরা বোলপুরে। বিজেপির সাংগঠনিক পরিভাষায় যে কর্মসূচির নাম, ‘পঞ্চায়েত কার্যকর্তা সম্মেলন’।

আগামী ২৩ নভেম্বর, বুধবার, পুরুলিয়ায় পঞ্চায়েতস্তরের নেতা, কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হবেন মিঠুন, সুকান্ত। তার পর দিন বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২৪ নভেম্বর মিঠুন-সুকান্ত জুটির সভা বাঁকুড়ায়। ২৫ নভেম্বর বিষ্ণুপুর, ২৬ নভেম্বর আসানসোল এবং ২৭ নভেম্বর, রবিবার কর্মসূচি অনুব্রতর বোলপুরে।

২০২১-এর বিধানসভা ভোটের প্রচারে গেরুয়া শিবিরের হয়ে একাধিক জনসভা করেছিলেন মিঠুন। কিন্তু সংগঠনের কাজে তাঁকে তেমন ভাবে দেখা যায়নি। সারা বাংলায় তুমুল জনপ্রিয় মিঠুনকে ভিড় টানার কাজেই মূলত লাগিয়েছিল পদ্ম শিবির। কিন্তু পঞ্চায়েতে রাজ্য সভাপতির সঙ্গেই তৃণমূল স্তরের সাংগঠনিক বৈঠকেও হাজির থাকতে চলেছেন মিঠুন। বিজেপির অন্দরের একটি অংশের দাবি, এই জুটি তৈরি করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই। সঙ্ঘ পরিবারের পুরনো কর্মী তথা বর্তমানে বিজেপি সাংসদ সুকান্তের সঙ্গে ভিড় টানতে ওস্তাদ মিঠুনকে জুড়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

প্রসঙ্গত, পুজোর পর রাজ্য বিজেপির কোর কমিটি ঘোষণা করে দিল্লি। তাতে প্রথম নাম স্বাভাবিক ভাবেই সুকান্তের। দ্বিতীয় শুভেন্দু অধিকারী, তৃতীয় প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পর চমক ছিল চতুর্থ নামে। তিনি মিঠুন চক্রবর্তী। সেই সময়ই ইঙ্গিত মিলেছিল, মিঠুনকে আরও দায়িত্ব দিতে চাইছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বস্তুত, সেই কমিটি ঘোষণার পর নভেম্বরেই প্রথম বাংলায় আসছেন মিঠুন। সুকান্তের সঙ্গে জুটি বেঁধে চষে ফেলবেন রাঢ়বঙ্গ এবং জঙ্গলমহল। এতে মূলত বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধিত হবে বলে মনে করছেন দিল্লির নেতারা। প্রথমত, সুকান্ত একে বারে তৃণমূলস্তর থেকে গেরুয়া রাজনীতির পতাকা বহন করে রাজ্যস্তরে সর্বোচ্চ পদে উঠে এসেছেন। ফলে সংগঠনের খুঁটিনাটি তাঁর নখদর্পণে। সঙ্ঘ-তত্ত্ব বোঝান জলের মতো। কিন্তু জনসভায় আগুনঝরানো বক্তৃতায় তিনি দড় নন। সেই অভাব পূরণ করবেন ‘মহাগুরু’।

প্রসঙ্গত, এর আগেও সুকান্তের সঙ্গে মিঠুনের পারস্পরিক সুসম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছিল। বালুরঘাটে সুকান্তের পুজো উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। একসঙ্গে হুগলির সভাতেও দেখা গিয়েছিল জুটিকে। এ বার তারই বৃহত্তর প্রকাশ হতে চলেছে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে। এ যাত্রায় সভার স্থান বাছার ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র। রাঢ়বঙ্গে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর এবং পুরুলিয়ায় বিজেপির সাংসদ। অন্য দিকে আসানসোল হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির, বোলপুর তৃণমূলের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি। শত্রুঘ্ন সিন্‌হার আসানসোলে তাঁর একদা সতীর্থ মিঠুন কী বলেন তা যেমন জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনই অনুব্রতর খাসতালুকে মহাগুরু-সুকান্ত জুটি কী করে, সে দিকেও নজর থাকছে।

এই মুহূর্তে গুজরাতে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত সুকান্ত। সেখান থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘মিঠুনদার এত বয়স হলেও তাঁর জনপ্রিয়তা যে কতটা সেটা আমি গত কয়েকটা সফরে তাঁর সঙ্গে থেকে দেখেছি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যাপারে তাঁর যা জ্ঞান এবং যে কোনও ঘটনার খবর রাখার আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সংগঠনের কাজে লাগতে চেয়ে মিঠুনদা নিজেও ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই, তাঁর উপস্থিতি কর্মীদের উদ্দীপ্ত এবং অনুপ্রাণিত করবে।’’

এর আগে মঞ্চ কাঁপানো সংলাপে জনতাকে মাত করতে দেখা গিয়েছিল মিঠুনকে। এ বারই প্রথম তিনি সংগঠকের ভূমিকায়। সাম্প্রতিক কালে যত বার বাংলায় এসেছেন, নিয়ম করে দাবি করে গিয়েছেন, তৃণমূলের নেতা, জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা। শেষ বার এসে দাবি করেছিলেন অন্তত ২৩ জন তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে তিনি নিবিড় যোগাযোগে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আরও বেশি তৃণমূল জনপ্রতিনিধির যোগাযোগ আছে। সংগঠকের ভূমিকায় নেমে পঞ্চায়েতের আগে কি সেই নামের তালিকাও প্রকাশ্যে আনবেন মহাগুরু? পুরুলিয়া দিয়ে রাঢ়বঙ্গ সফর শুরুর ঢের আগেই তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জল্পনা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy