মিমি মনে করেন, তিনি সরব হয়েছিলেন বলেই অত বড় প্রতারণা-কারবার প্রকাশ্যে এসেছে, বহু মানুষের প্রাণ বেঁচেছে।
খোদ সাংসদ প্রতিষেধক-প্রতারণার শিকার হওয়ায় গত বছর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। অজান্তে জাল প্রতিষেধক নিয়ে গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন মিমি চক্রবর্তী। কিন্তু ওই ঘটনায় যে ভাবে তাঁকে প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হতে হয়েছিল, তা নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই তাঁর। বরং, তিনি মনে করেন, ওই সময় তিনি সরব হয়েছিলেন বলেই অত বড় প্রতারণা-কারবার প্রকাশ্যে এসেছে। বহু মানুষের প্রাণ বেঁচেছে। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানা কথা’য় জানালেন অভিনেত্রী-সাংসদ।
২৩ জুন কসবা থানার অন্তর্গত রাজডাঙায় একটি টিকা-শিবির থেকে কোভিড প্রতিষেধক নিয়েছিলেন মিমি। প্রতিষেধক নেওয়ার পর খেয়াল করেন, তাঁর ফোনে প্রতিষেধক প্রাপ্তি সংক্রান্ত শংসাপত্র আসেনি। এর পরেই কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে মিমি জানান, নিজেকে আইএএস অফিসার এবং কলকাতা পুরসভার যুগ্ম-কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেবাঞ্জন দেব নামে জনৈক ব্যক্তি প্রতিষেধকের এই জাল শিবির চালাচ্ছেন। মিমির অভিযোগের ভিত্তিতেই দেবাঞ্জনকে গ্রেফতার করে কসবা থানা।
এর পরেই জাল টিকা শিবির-কাণ্ডের তদন্তে নামে পুলিশ। উঠে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই ঘটনা প্রসঙ্গেই শনিবারের সান্ধ্য আড্ডায় মিমি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস সে দিন আমি গিয়েছিলাম! নইলে ও (জাল টিকা শিবির-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেব) হয়তো ধরাই পড়ত না। আমি টিকা নিতে না গেলে জানাই যেত না যে, ও (দেবাঞ্জন) এতগুলো ভুয়ো শিবির চালাচ্ছে খাস কলকাতা শহরে। আমি তখন তৎপর না হলে হয়তো আজও ও ওই শিবির চালিয়ে যেত।’’
দেবাঞ্জনের শিবির থেকে টিকা নেওয়ার তিন দিন পর থেকেই মিমির শরীরে আচমকাই জলশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল। রক্তচাপ নেমে যাওয়ার পাশাপাশি পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে থাকেন সাংসদ-তারকা। বাড়িতে বেশ কয়েক দিন বিশ্রামে ছিলেন তিনি। তবে একই সঙ্গে এই প্রশ্নও উঠেছিল, সাংসদ হয়েও সঠিক খবরাখবর না নিয়েই কেন একটি ভুয়ো টিকা শিবিরে প্রতিষেধক নিতে চলে গিয়েছিলেন তিনি? গোটা ঘটনায় সাংসদ মিমির ‘অসচেতনতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও আক্ষেপ নেই তাঁর। মিমি বলেন, ‘‘এই গোটা ঘটনার সঙ্গে আমার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় জড়িয়ে থাকলেও আমি খুশি যে, সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ করেছিলাম আমি। একটা ভুয়ো লোকের থেকে এত মানুষকে বাঁচাতে পেরেছি, এতেই আমি খুশি। আর প্রশাসনও কড়া পদক্ষেপ করেছে আমার অভিযোগের ভিত্তিতে।’’
প্রসঙ্গত, জাল টিকা শিবির-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত হিসেবে ধৃত দেবাঞ্জন পুলিশি জেরার মুখে জানিয়েছেন, কসবার শিবিরে কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে অ্যামিক্যাসিন ইঞ্জেকশন, যা পুরসভার নাম করে বাগরি মার্কেট থেকে কিনেছিলেন তিনি। তার কসবার অফিসেই কোভিশিল্ডের নকল মোড়ক ছাপানো হত। পরে ওই ইঞ্জেকশনের ভায়ালে তা বসিয়ে দিতেন তাঁর চার কর্মী! পরে এ-ও জানা যায়, ভবিষ্যতে চড়া দরে বেচতে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকার মাস্ক, স্যানিটাইজারও বেআইনি ভাবে মজুত করে রেখেছিলেন দেবাঞ্জন।
এর পরেই দেবাঞ্জনের একের পর এক অফিস এবং বাড়ি তল্লাশি করে উদ্ধার হয় ভুয়ো পরিচয়পত্র, কলকাতা পুরসভার নকল শিলমোহর, কাগজপত্র, তাঁর ব্যবহৃত টয়োটা গাড়ি। জানা যায়, নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন রাখতে গাড়িটিতে নীল বাতি, পতাকাও ব্যবহার করতেন দেবাঞ্জন। গাড়ির পিছনের কাচে লাগানো থাকত রাজ্য সরকারের বিশেষ স্টিকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy