Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Baishakhi Banerjee

জেদাজেদি চরমে, বন্ধ হওয়ার মুখে বৈশাখীর কলেজ

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার পদে পুনর্বহাল না করা এবং জোর করে কলেজে ঢুকে অশান্তি বাধানো নিয়ে বছরের গোড়ার দিকে মিল্লি আল-আমিন কলেজের ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রাজ্য সরকারের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মিল্লি আল-আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা।

বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় মিল্লি আল-আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২০ ২২:১৩
Share: Save:

কার্যত বন্ধ হওয়ার মুখে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজ। মধ্য কলকাতার যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে রয়েছেন বৈশাখী, সেই মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে সব সরকারি কর্মীকে প্রত্যাহার করে নিতে বলে উচ্চশিক্ষা দফতরকে চিঠি দিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা মিল্লি এডুকেশনাল অর্গানাইজেশন। সরকারি অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং সরকারি শিক্ষাকর্মীদের কোনও প্রয়োজন নেই, সংস্থা নিজের মতো করে কলেজ চালাবে— চিঠিতে এমনই লিখেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির সম্পাদক।

গত ২৫ জুন ওই সংস্থার তরফে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রধান সচিবকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘‘২১ জুন সংস্থার সাধারণ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরকে অনুরোধ জানাচ্ছি, মিল্লি আল-আমিন কলেজ (গার্লস)থেকে সরকার নিযুক্ত সমস্ত অধ্যাপক এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনওরকম অনুদান না নিয়ে, এখন থেকে আমাদের সংস্থাই কলেজ চালাবে।’’

শিক্ষা দফতরের স্পষ্ট নির্দেশ সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত ভাবে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষার পদে পুনর্বহাল না করা এবং জোর করে কলেজে ঢুকে অশান্তি বাধানো নিয়ে বছরের গোড়ার দিকে মিল্লি আল-আমিন কলেজের ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও রাজ্য সরকারের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, কলেজের পৃষ্ঠপোষক সংস্থার একটি অংশ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে আলাদা পরিচালন সমিতি তৈরি করে ফেলে। কিন্তু সেই পরিচালন সমিতিকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে বৈশাখীকে ফের পুনর্বহাল করে শিক্ষা দফতর।

আরও পড়ুন: সবার জন্য মেট্রো চান মুখ্যমন্ত্রী ।। এখনই নয়, বলছে মেট্রো​

তার পরেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে মানতে রাজি হয়নি ‘অবৈধ’ ঘোষিত ওই কমিটি। বরং সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তারা জানিয়ে দেয়, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্বহাল করার অধিকার শিক্ষা দফতরের নেই। পুনর্বহাল করার অধিকার একমাত্র পরিচালন সমিতির। এবং সমিতি তাঁকে পুনর্বহাল করেনি। কিন্তু তাদের আপত্তি সত্ত্বেও কলেজে যোগদান করেন বৈশাখী। তার কয়েক মাস কাটতে না কাটতেই কলেজের ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থা রাজ্য সরকারকে কর্মী ও অনুদান প্রত্যাহার করতে আর্জি জানিয়ে চিঠি দিল।

বিষয়টি নিয়ে এ দিন মুখ খুলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আনন্দবাজারকে তিনি বলেন, ‘‘২০১৮ সাল থেকেই অচলাবস্থা তৈরি করা হচ্ছিল। আমিরুদ্দিন ববি যে দিন থেকে এই কলেজের পরিচালন সমিতির মাথায় বসেছেন, সে দিন থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি একটাও বৈঠক ডাকেননি। আসলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষা সুনিশ্চিত করার এই প্রতিষ্ঠানকে উনি একটা তিনতলা বাড়ি হিসেবে দেখেছেন। কখনও ভেবেছেন এখানে কমিউনিটি সেন্টার বানাবেন, কখনও আবার সেরিমনি হল বানাবেন ভেবেছেন। কখনও বলেছেন এখানে তিনি স্কুল খুলতে চান। এমন নানা দুরাভিসন্ধি নিয়ে তিনি কলেজটার চলার পথ কঠিন করে তুলছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী নিজে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। শুধুমাত্র এই কলেজ নিয়ে আট থেকে দশ বার বৈঠক হয়েছে। কিন্তু আমিরুদ্দিন ববিরা সমাধান হতে দিতে চান না।’’

কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা হিসেবে তিনি কি মিল্লি এডুকেশনাল অর্গানাইজেশনাল এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবেন? বৈশাখী বলেন, ‘‘২০০২ সাল থেকে এই কলেজে রয়েছি। তখন থেকেই জনাকয়েক স্বার্থান্বেষীর বিরুদ্ধে লড়ছি। তাতে বুঝেছি, সরকার বদলায়, এদের মানসিকতা বদলায় না। আর যখনই এরা পেরে ওঠে না, তখনই আমার গায়ে ‘সংখ্যালঘু-বিরোধী’ তকমা লাগিয়ে দিয়ে অন্য খেলা খেলতে শুরু করে। তাই আমি আর এ নিয়ে লড়তে যাব না।’’

আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে করোনা সংক্রমণ ৬২৪ জনের, মৃত ১৪, বাড়ছে সুস্থতার হার

মিল্লি এডুকেশনাল অর্গানাইজেশনের কথা মেনে নিয়ে যদি মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে সব সরকারি শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের তুলে নেয় উচ্চশিক্ষা দফতর, তা হলে কি কলেজ আর আদৌ চলবে? কত দিনের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন করে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করবে, তাঁদের বেতনই বা কোথা থেকে আসবে, কলেজের অন্যান্য খরচপত্র কী ভাবে চলবে, সে সব এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে ওই কলেজ থেকে অধ্যাপক ও শিক্ষাকর্মীদের প্রত্যাহার করা হলে তাঁদের যে অন্যান্য কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য অন্য কোনও কলেজে কাজে যোগ দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আমার কাছে একটা লড়াইয়ে হারের শামিল। আমি কলেজটা বাঁচাতে পারলাম না। তাই আমি আর পুনর্বাসন চাই না। আমি শুধু চেয়েছিলাম, আমার সহকর্মীদের প্রত্যেকের উপযুক্ত পুনর্বাসন হোক। সেটা হচ্ছে। আমি আর কিছু চাইছি না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE