ফাইল চিত্র।
করোনায় লকডাউনের ভীতি ফের ঘরমুখো করছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। ব্যাগপত্র সঙ্গে, ছেলে-মেয়েকে কোলে-কাঁখে নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে অথবা রোজগারের শেষ আনাটুকুর সঙ্গে কানের সোনার দুল, নাকছাবি বেচে ট্রাক্টরের ডালায় ঠাসাঠাসি করে ঘরের পথে ফেরার স্মৃতি এখনও দগদগে। করোনা কী, তা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঠেকে শেখা। এ বার তাই সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তেই আগে ঘরে ফেরার তাড়া তাঁদের।
বীরভূমের মুরারই অঞ্চলের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক কাজ ফেলে এমনকি প্রাপ্য মজুরির পুরোটা না-নিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছেন ইতিমধ্যে। দূরপাল্লার ট্রেন চালু থাকায় মুম্বই, দিল্লি, কেরল সহ বহু রাজ্য থেকে এ বার অন্তত ট্রেনে বাড়ি ফেরার ‘সৌভাগ্য’ হয়েছে তাঁদের। কিন্তু বার বার ঠেকেও কেন সেই বাইরে যাওয়া?
শ্রমিকদের দাবি, এই রাজ্যের তুলনায় ভিন্ রাজ্যে পারিশ্রমিক বেশি মেলে। মুরারইয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে আড়াইশো থেকে চারশো টাকা রোজগার হয়। সেখানেই মুম্বইয়ে আট ঘণ্টা কাজ করে ন’শো টাকা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত কাজ করলেও বাড়তি টাকা। তা ছাড়া নিজের জেলায় প্রত্যেক দিন কাজ জোটে না। তাই বাধ্য হয়ে এলাকার অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে যান। এ বার ফের এক বার লকডাউনের ভীতি তাঁদের কাজ ফেলেই বাড়িমুখো করেছে।
গত দু’দিনে মুরারই স্টেশনে ও রাস্তায় শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ছবিটা দেখা যাচ্ছে। মুরারই ২ ব্লকের পাইকর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক সাকির শেখ, রাজকুমার সিংহরা বলেন, ‘‘গত বছর লকডাউনের সময় মুম্বইয়ে আটকে পড়েছিলাম। আলু-ভাত খেয়ে দিন সাতেক কাটাতে হয়। মহাজনের থেকে টাকা পাওয়া যাচ্ছিল না। গরু-ছাগল ও সোনা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদের কয়েক জন শ্রমিক মিলে বাড়ি ফিরেছিলাম। সে-সব ভয়ঙ্কর দিন! এ বার করোনা বেড়ে যাওয়ায় আগে থেকেই বাড়ি ফিরেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার যাব।’’
মুরারইয়েরই কাশিমনগর গ্রামের আনোয়ার শেখ শুক্রবার দিল্লি থেকে হাওড়ায় নেমেছেন। ফোনে জানালেন, তাঁর মতো বহু পরিযায়ী শ্রমিক এখন বাড়ির পথে। টিকিট না পাওয়ায় অনেকে এখনও দিল্লিতে আছেন। তাঁরাও বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন। আনোয়ারের কথায়, ‘‘দেশ জুড়ে লকডাউনের সময় দু'শো কিলোমিটার হেঁটে, পুলিশের তাড়া খেয়ে গ্রামে ফিরেছিলাম। আজও সেই অভিজ্ঞতা পিছু তাড়া করে। তাই আর ঝুঁকি নিইনি।’’
আনোয়ার, রাজকুমাররা অবশ্য দু’বছরে এই অবস্থাকেই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘যা সঞ্চয় সব তো শেষ। কাজ করতেই হবে। ওমিক্রনের ঢেউ একটু কমলেই ফের যাব ভিন্ রাজ্যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy