দুই ছবি। সভা শুরুর সময় তৃণমূল সমর্থকদের ভিড় (বাঁ দিকে)। সভার মাঝপথেই অনেক সমর্থক ফিরে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে যায় এলাকা। ঝাড়গ্রামে রবীন্দ্র পার্ক সংলগ্ন মাঠে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।
বিজেপি-র পাল্টা সভায় মাঠ ভরিয়েও শেষ পর্যন্ত লোক ধরে রাখতে পারল না তৃণমূল!
শুক্রবার বিকেলে ঝাড়গ্রাম শহরের রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন মাঠে তৃণমূলের জনসভা চলাকালীন দলে দলে লোকজন উঠে চলে গেলেন। মঞ্চ থেকে দলের জেলা নেতারা এবং মঞ্চের নিচে থাকা দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা জনতাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। শেষ বক্তা তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় কার্যত ফাঁকা মাঠে বক্তৃতা দিলেন। রাজ্যে তৃণমূলের জমানায় এমনই ব্যতিক্রমী ছবি এ দিন দেখা গেল অরণ্যশহরে।
গত ২২ জানুয়ারি শহরের রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন মাঠে জনসভা করেছিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। পুলিশের হিসেবে, সে দিন অপরিসর ওই মাঠে হাজার দশেক লোক হয়েছিল। বিজেপি-র সভার পাল্টা সভা করার ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতি’ নেয় তৃণমূল। দলীয়স্তরে সিদ্ধান্ত হয়, পাল্টাসভায় বিজেপি-র দ্বিগুণ জমায়েত করা হবে। এ জন্য ব্লকে-ব্লকে কর্মিসভাও করেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। রবীন্দ্রপার্ক সংলগ্ন মাঠে রাহুলবাবুর সভামঞ্চ যেখানে হয়েছিল, ঠিক সেখানেই এ দিন তৃণমূলের সভামঞ্চটি করা হয়।
মঞ্চের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর বিশাল ছবির পাশের লেখা ছিল ‘তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকে বিশাল জনসভা’। সভার বক্তারা সকলেই ছিলেন শাসক দলের জেলাস্তরের নেতা ও জনপ্রতিনিধি। রাজ্য থেকে একমাত্র ছিলেন তৃণমূলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোক আনার ক্ষেত্রে দলের নেতা-কর্মীরা কোনও কসুর করেননি। দুপুর থেকেই বাস ও ট্রেকারের মতো নানা যানবাহনে শয়ে শয়ে লোকজনকে নিয়ে আসা হয়। দুপুর দেড়টা থেকে লোকজন আসতে থাকেন। দু’টো নাগাদ সভার কাজ শুরু হয়। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা ‘বিজেপি-র অনুপ্রবেশ’ ঠেকানোর জন্য কর্মীদের সতর্ক থাকার নিদান দেন। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম শহর সভাপতি প্রশান্ত রায় বলেন, “এখানে বিজেপি সভা করেছিল। আমরা পাল্টা সভা করে বুঝিয়ে দিতে চাই, এ রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কারও অস্তিত্ব নেই।”
প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, “গুজরাতের একটা পাগলা হাতি জঙ্গলমহলে আমদানি হয়েছে। গুলি করে নয়, তির মেরেও নয়, হুলাপার্টি দিয়ে খেদিয়ে হাতিটাকে গুজরাতের রাস্তা ধরিয়ে দিতে হবে।” দুলালবাবুর বক্তৃতা চলাকালীন বিকেল তিনটে নাগাদ মাঠে বসে থাকা জনতার এক দু’জন করে উঠতে শুরু করেন। এরপর রাজ্য তৃণমূলের শ্রমিক নেতা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বক্তৃতা করার সময় দলে দলে মহিলারা উঠে যেতে থাকেন। এরপর সাড়ে তিনটে নাগাদ গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “এখন সারদা কেলেঙ্কারি, টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আরে মহাভারতেও অনেক কেলেঙ্কারি হয়েছে। ও সব কথায় কান দেবেন না।” কিন্তু বিধায়কের কথা শোনার আগ্রহ দেখা যায়নি জনতার মধ্যে। বরং দলে দলে লোকজন মাঠ থেকে উঠে চলে যেতে থাকেন। দলীয় স্বেচ্ছাসেবকেরা লোকজনকে আটকানোর বিস্তর চেষ্টা করতে থাকেন। জামবনি থেকে আসা এক প্রৌঢ়া, সাঁকরাইলের এক বধূ ঝাঁঝিয়ে জবাব দেন, “থামো তো বাপু, সেই কখন এসেছি। পেটে দানাপানি পড়েনি। আর বসতে পারব নাই।”
তিনটে চল্লিশ নাগাদ জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষও বক্তৃতার শুরুতেই আবেদন করেন, “আপনারা চলে যাবেন না। সভার কাজ শেষ করতে দিন। আর একটু বসুন।” পরিস্থিতি দেখে জেলা তৃণমূলের আর এক কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষও কয়েক মিনিটেই বক্তৃতা শেষ করে দেন। বিকেল সোয়া চারটে নাগাদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় যখন সংবাদমাধ্যমের মুণ্ডপাত করছেন, তখন মাঠ প্রায় ফাঁকা!
কেমন এমন হল?
দীনেনবাবুর সাফাই, “আজকাল লোকজন বেশিক্ষণ বক্তৃতা শুনতে চান না। তাই প্রচুর জনসমাগম করেও লোকজনকে আটকে রাখা যায়নি।” কত লোক হয়েছিল? দীনেনবাবুর জবাব, “সেটা তো আপনারা বলবেন।” বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের টিপ্পনি, “মানুষ এখন আর তৃণমূলের সঙ্গে নেই। সভায় জোর করে লোকজন নিয়ে এসেও তাই ওরা শেষরক্ষা করতে পারেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy