ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে এ বার জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পঞ্চায়েত সম্মেলন আয়োজন সংক্রান্ত নির্দেশিকা জেলায় এসে পৌঁছেছে। সম্মেলনে থাকবেন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি থেকে জেলা পরিষদের সভাধিপতি, সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ, প্রধান ও সঞ্চালকেরা। রাজ্যে আগামী ১৭-১৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য পঞ্চায়েত সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই জেলায় সম্মেলন করার কথা বলা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্মেলনে মূলত পঞ্চায়েতের কাজকর্ম খতিয়ে দেখা হবে। বিভিন্ন প্রকল্পে কোথায় সমস্যা রয়েছে, সমস্যার কারণ কী, সমস্যার সমাধানে কী কী করণীয়, তার রূপরেখা তৈরি করার জন্যই এই সম্মেলন। সম্মেলনে সমস্যার কথা জানাবেন নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যরা। মন্ত্রী ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা তাঁদের বক্তব্য শুনে বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে পঞ্চায়েত মন্ত্রকে পাঠাবেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, বর্তমানে সারদা থেকে খাগড়াগড়, তার উপরে বিজেপি-র বাড়বাড়ন্ত- এর থেকে নজর ঘোরাতে আবারও এক বার সম্মেলনের নামে এক আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে দলের নির্বাচিত সদস্যদের ভাল খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকবে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েতের উন্নয়ন নয়, ২০১৬ সালের নির্বাচন বৈতরণী কীভাবে পার করতে হবে, তা বোঝাতেই এই সম্মেলনের আয়োজন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “সরকারিভাবে এমন করে পঞ্চায়েত সম্মেলনের তো কোনও রেওয়াজ নেই। আসলে পঞ্চায়েত যে কিছুই করছে না, ফলে উন্নয়ন বলে কিছু হয়নি, মানুষের কাছে জবাবদিহি করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তাই এ সব করে কিছুটা যদি এগোনো যায় সেই চেষ্টা করতে পারে। তবে সরকারি টাকা খরচ করে এমনটা না করলেই হত।” আর বিজেপি-র জেলা যুব মোর্চার সভাপতি শুভজিৎ রায় বলেন, “সরকারি খরচে দলীয় প্রচার করার এটাও একটা পন্থা। তবে কিছু লাভ হবে না। পঞ্চায়েত যে কাজ করেনি, তা সকলেই বুঝে গিয়েছে। ফলে জেলা ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। এই সম্মেলন করে অকারণ লক্ষ লক্ষ টাকা না ব্যয় করলেই হত।”
সম্প্রতি নবান্নে জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতিদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে বিভিন্ন জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই তিনি জেলায় জেলায় পঞ্চায়েত সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। সম্মেলনে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিভাগের সঞ্চালকরা উপস্থিত থাকবেন, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি, জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে শুরু করে সমস্ত স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা উপস্থিত থাকবেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। প্রধান-উপপ্রধান মিলিয়েই সংখ্যাটা হবে ৫৮০ জন। ২৯টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ সভাপতি মিলিয়ে রয়েছেন ৫৮ জন। এ ছাড়াও ১০টি স্থায়ী সমিতি রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির কমার্ধ্যক্ষ রয়েছেন ২৯০ জন। জেলা পরিষদে সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষ মিলিয়ে ১১ জন। গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫টি উপ সমিতি রয়েছে। ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মিলিয়ে সঞ্চালকের সংখ্যা ১৪৫০ জন।
প্রশাসনিক ব্যক্তি থেকে প্রতিনিধি মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় আড়াই হাজার হবে। বিশেষত, বড় জেলাগুলির ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি। যে সব জায়গায় বড় সভাকক্ষ নেই সেখানে আবার কোনও স্টেডিয়ামে বা মাঠে করতে হবে। তার জন্য মঞ্চ তৈরি করতে হবে। সবার সমস্যা শুনতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তাই এক দিন নাকি দু’দিন ধরে সম্মেলন হবে, কী খাওয়াতে হবে - এ সব নিয়ে চিন্তা করে প্রশাসনিক কর্তাদের মাথায় হাত। জেলার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “সবে নির্দেশিকা এসেছে। যা দেখে কী করব ভেবে কূল পাচ্ছি না।” তাই রাজ্য প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার পরেই এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy