Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

একশো দিনের কাজে এ বার পুকুরে মাছ চাষ

এতদিন স্লোগান ছিল ‘জল ধরো, জল ভরো’। এ বার সেই ভরা জলে মাছ চাষে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লক। পরিবর্তিত স্লোগান হল, ‘জল ধর মাছ ভর’। চলতি মরসুম থেকেই যা কার্যকরী করতে চলেছে ওই ব্লক। বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “একশো দিনের প্রকল্পে শ’য়ে শ’য়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এলাকার মানুষকে বাইরের রাজ্যের মাছের উপর ভরসা করে থাকতে হয়।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:৪২
Share: Save:

এতদিন স্লোগান ছিল ‘জল ধরো, জল ভরো’। এ বার সেই ভরা জলে মাছ চাষে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল ব্লক। পরিবর্তিত স্লোগান হল, ‘জল ধর মাছ ভর’। চলতি মরসুম থেকেই যা কার্যকরী করতে চলেছে ওই ব্লক। বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “একশো দিনের প্রকল্পে শ’য়ে শ’য়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও এলাকার মানুষকে বাইরের রাজ্যের মাছের উপর ভরসা করে থাকতে হয়।”

আর অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তীর কথায়, “আমাদের এই পর নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাই এ বার মাছ চাষেরও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” সাঁকরাইলে এই প্রকল্প সফল হলে সারা জেলা জুড়েই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য উদ্যোগী হবে প্রশাসন। একশো দিনের প্রকল্পে প্রথম থেকেই পুকুর খনন বা মজে যাওয়া পুকুর সংস্কারের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল। মূলত, তার সুদুরপ্রসারী ফলের দিকে তাকিয়েই এই পরিকল্পনা। কারণ, গ্রীষ্ম পড়লেই দ্রুত গতিতে জলস্তর নামতে থাকে। ফলে ভূপৃষ্ঠের জলকে না ধরে রাখা গেলে ভবিষ্যতে জল সঙ্কটে পড়তে হবে মানুষকে। সেচের জন্য দূরের কথা, পানীয় জলের হাহাকার পড়বে।

এ ছাড়াও পুকুর খনন করলে আরও অনেক সুবিধে পাওয়া সম্ভব। মাছ চাষ, পুকুরের পাড়ে ফলের গাছ লাগিয়ে ফলও পাবেন। কিন্তু এতদিন এসব কথার কথা ছিল। অথচ, মাছের চাহিদা নেই এমন নয়। এ রাজ্যের মানুষকে প্রতিনিয়ত মাছের জন্য অন্য রাজ্যের উপর ভরসা করতে হয়। বিডিও-র কথায়, “এ বার মাছ বিক্রির জন্য হা হুতাশ করতে হবে না। মাথায় নিয়ে দূরে যেতেও হবে না। কারণ, স্থানীয় মানুষই মাছ কিনবেন।” এক্ষেত্রে দু’দিক দিয়েই লাভবান হবেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় এলাকায় মাছ উৎপাদন হলে অনেক কম দামে মাছ মিলবে। কারণ, দূর থেকে আসার পরিবহণ খরচও থাকবে না।

প্রশাসন জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে সাঁকরাইল ব্লকের ছত্রী ও লাউদহ-এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। । সম্প্রতি একশ দিনের প্রকল্পে ছত্রীতে ১৪২টি (যাতে ৬ হেক্টর জল থাকবে) ও লাউদহতে ৪১টি পুকুর (২ হেক্টর জল থাকবে) পুকুর খনন করা হয়েছে। যার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। এবার সেখানেই পুকুর মালিকদের দিয়ে মাছ চাষ করানোর উদ্যোগ নিচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই মৎস্য দফতরকে দিয়ে সমীক্ষাও করানো হয়েছে।

মৎস্য দফতর জানিয়েছে, ০.৫ হেক্টর জলে বছরে ৪০০ কেজি মাছ মাছ উৎপাদন সম্ভব। এই পরিমাণ পুকুরে মাছ করতে বড় জোর ১৫ হাজার টাকা খরচ হবে। বছরের শেষে ১০০ টাকা কেজি দরে মাছ বিক্রি করলেও ৪০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারবেন একজন মৎস্যচাষী। অর্থাৎ বছরে লাভ হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। প্রথমে এভাবেই ৪০০ ইউনিট অর্থাৎ ০.৫ একর করে ৪০০টি জায়গায় মাছ চাষ করা হবে। অর্থাৎ বছরে ১৬ হাজার কুইন্টাল মাছ উৎপাদন হবে। যা ব্লকের চাহিদা মিটিয়েও পাশাপাশি ব্লককেও কিছু মাছ দিতে পারবে। প্রশাসন জানিয়েছে, দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কিছু মৎস্যচাষি লাভ করছে দেখলে বাকিরাও উৎসাহিত হবেন।

শুধু এটাই নয়, ওই সমস্ত পুকুরের ধারে ভাল কলা গাছ লাগানোরও ব্যবস্থা করছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই উন্নত কলা চারা তৈরির কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। মৎস্য দফতর ও উদ্যান পালন দফতরের সাহায্যে এই কাজ করা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের দাবি, “দু’তিন বছরের মধ্যেই সাফল্য মিলবে বলে আশা। ধীরে ধীরে জেলা জুড়ে এই পদ্ধতিতে বভিন্ন ফলের গাছ লাগিয়ে একশ দিনের প্রকল্পে তৈরি সমস্ত পুকুরকেই সাজিয়ে তোলার হবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষেরও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নতি ঘটবে বলেই মনে হয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

100 days work fishing in lake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy