Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পরিযায়ীদের গৃহবাস কেন! প্রশ্নে সুরক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদনগত কয়েকদিনে ভিন রাজ্যে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন। বুধবারও তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে ট্রেনে ফিরেছেন ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৫:২৩
Share: Save:

ঘরে ফিরছেন ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া লোকজন। হাসি ফুটছে তাঁদের পরিবারে মুখে। কিন্তু উদ্বেগ বাড়ছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুসারে, মঙ্গলবার পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬। এঁদের মধ্যে অধিকাংশই জেলার বাইরে থেকে বা বাইরে যাওয়া কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। জেলাবাসীর একাংশের উদ্বেগের কারণ এখানেই।

গত কয়েকদিনে ভিন রাজ্যে থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন। বুধবারও তামিলনাড়ুর ভেলোর থেকে ট্রেনে ফিরেছেন ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা। তাঁদের প্রথমে মেচেদায় পথসাথী নিভৃতবাস কেন্দ্রে (কোয়রান্টিন সেন্টারে) নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। করোনা উপসর্গ না থাকলে ওই ব্যক্তিদের বাড়িতে হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

ওই বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাঁরা জানাচ্ছেন, বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকতে গেলে ভিন্ রাজ্য থেকে আগত ব্যক্তিদের আলাদা ঘরে থাকার নিয়ম। আলাদা শৌচাগারও ব্যবহার করতে হবে তাঁদের। কিন্তু দাবি, জেলায় যে সব পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফিরছেন, তাঁদের অনেকেই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল না হওয়ায় বাড়িতে আলাদা ঘরও নেই। ফলে নিজ ছোট ঘরে নিভৃতবাসে থাকা নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশিকার যুক্তকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আবার, একাংশ অভিযোগ করেছেন, ব্লকে ব্লকে যে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারগুলি বানানো হয়েছে, সেগুলি তাহলে কবে কাজে লাগবে!

গত তিন দিনে ভগবানপুর, পটাশপুর এবং এগরা শহর এলাকায় ছত্তিসগঢ়, তামিলনাড়ু, চেন্নাই, কেরল, বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় দু’শতাধিক মানুষ এসেছেন। তাঁরা ঘরেই নিভৃতবাসে রয়েছেন। অনেকে আবার নিয়ম না মেনে এলাকায় বেরিয়ে পড়ছেন বলেও অভিযোগ। এ দিকে, ওই সব এলাকার সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারগুলিতে এখনও তালাই খোলা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তাই কোথাও কোথাও উদ্যোগী হয়েছেন স্থানীয়েরাই। গ্রামকে সুরক্ষিত রাখতে মহকুমার বামুনদা, কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা নিজেরাই এলাকার ক্লাব বা স্কুলে নিভৃতবাস কেন্দ্র করেছেন। যাঁদের ঘরে আলাদা করে থাকার উপায় নেই, তাঁরা সেখানে থাকছেন। নিভৃতবাসে থাকা প্রসঙ্গে ব্লক প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এগরার মহকুমাশাসক অপ্রতিম ঘোষের অবশ্য জবাব, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা মতো ভিন্ রাজ্য থেকে আসা ব্যক্তিদের ঘরে থাকতে বলা হচ্ছে। যেভাবে সরকারি নির্দেশ আসছে, সেভাবেই আমরা কাজ করতে বাধ্য।’’

এগরার মতো একই দাবি উঠেছে কোলাঘাটেও। এক দিন আগেই ওই ব্লকের এক বাসিন্দার করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে। তাঁর পরিবারের সদস্যদের পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু ওই এলাকায় সম্প্রতি ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ির বদলে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখার দাবি করেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের যুক্তি, স্বাস্থ্য দফতরে পক্ষে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালানো সম্ভব নয়। ফিরে আসা শ্রমিকদের সরকারি নিভৃতবাসে রাখার ব্যবস্থা করা হলে, আগামী ১৪ দিন ওই ব্যক্তিরা আর বাইরে বেরোতে পারবেন না। ফলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না। কোলাঘাটের বাঁকাডাঙা গ্রামের বাসিন্দা সুরজিৎ মাজি বলেন, ‘‘গ্রামের দিকে জনবসতি খুবই ঘন। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের ১৪ দিন বাড়িতে না রেখে সরকারি নিভৃতবাসে রাখা উচিত। নাহলে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।’’

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নজরে রাখবেন স্বাস্থ্য এবং আশা কর্মীরা। কিন্তু সে জন্য কি পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় চার হাজার আশাকর্মী রয়েছেন। তাই ভিন রাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি নিয়ত স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখার কাজে কোনও সমস্যা হবে না।’’

কিন্তু সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারগুলি তাহলে রয়েছে কেন? এ ব্যাপারে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের জবাব, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর নয়, এটা প্রশাসনের নির্দেশ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Workers Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy