Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
murder

নৈশরক্ষীর খোঁজেই কিনারা 

পুলিশের দাবি, মোট ছ’জন এই খুনের ঘটনায় যুক্ত। বাকিদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানান, সম্পত্তির জন্য শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। তদন্তে এ দিন ঘটনাস্থলে যায় তিন সদস্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল।

খড়্গপুরে রেল কোয়ার্টারে তদন্তে ফরেন্সিক দল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

খড়্গপুরে রেল কোয়ার্টারে তদন্তে ফরেন্সিক দল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

খুনের দিন নৈশরক্ষীরা কোথায় ছিলেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হাতে এল নতুন তথ্য। আর সেই তথ্যের সূত্র ধরেই খড়্গপুরের অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী জেবি সুব্রহ্মণ্যম খুনের কিনারা করল পুলিশ। গ্রেফতার হল তিনজন। পুলিশের দাবি, মোট ছ’জন এই খুনের ঘটনায় যুক্ত। বাকিদের খোঁজে চলছে তল্লাশি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানান, সম্পত্তির জন্য শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। তদন্তে এ দিন ঘটনাস্থলে যায় তিন সদস্যের ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল।

রেলশহরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার রেল কোয়ার্টার থেকে গত সোমবার সকালে উদ্ধার হয়েছিল সুব্রহ্মণ্যমের দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, প্রতিদিন রাতে নৈশপ্রহরীরা এলাকা পাহারা দিলেও খুনের ঘটনার আগের দিন রাতে, অর্থাৎ রবিবার রাতে তাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন? কেন? পুলিশ জানতে পারে, শনিবার রাতপ্রহরীদের মারধর করা হয়েছিল। কারা মারল? জানা যায়, যারা মেরেছে তাদের মধ্যে ছিল সুধীর দাস নামে এক ব্যক্তি। পাম্প অপারেটর সুধীর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। থাকে সুব্রহ্মণ্যমের কোয়ার্টারের পিছনেই। আগেও নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল সে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সুধীরকে জেরা করে শঙ্কর রাওয়ের নাম সামনে আসে। সুধীরের মতোই শঙ্করও পাম্প অপারেটার এবং পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। ওই দু’জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, গোটা পরিকল্পনা করেছিল সুধীরই। অসম থেকে আনা হয়েছিল এক পেশাদার দুষ্কৃতীকে। এ ছাড়াও ছিল আয়মার এক যুবক। মেদিনীপুর থেকে আনা হয়েছিল আরও দু’জনকে। যে কোনও ধরনের তালা ভাঙার ক্ষেত্রে দক্ষ তারা। পুলিশ প্রথমে সুধীর ও শঙ্করকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার করে মালঞ্চ ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা মোহন রাওকে। তার কাছেই সোনার গয়নার কিছুটা বিক্রি করে দুষ্কৃতীরা।
তদন্ত নেমে পুলিশ জানতে পারে, যেহেতু সুব্রহ্মণ্যম কোয়ার্টারে একাই থাকতেন, তাই সদর দরজা বন্ধ করতেন না তিনি। আর পড়শি হওয়ার সুবাদে এ কথা জানত সুধীর। কিন্তু সদর দরজা দিয়ে দুষ্কৃতীরা ঢোকেনি। পিছনের দরজার লক ভেঙে কোয়ার্টারে ঢোকে তারা। কেন? পুলিশ সূত্রের খবর, সদর দরজা রাস্তার যে দিকে সেখানে লোকের আনাগোনা বেশি। তাই দুষ্কৃতীরা বেছে নিয়েছিল পিছনের দরজা। নিরুপদ্রব ভাবে কাজ সারতে মারধর করা হয়েছিল রাত প্রহরীদের।

জবাব মেলেনি

• খুনের আগে কী কী হয়েছিল
• শুধুই কি গয়নার জন্য খুন
• টাকাপয়সা লোপাট হয়েছে কি
• ঘটনাস্থলে মেলা মহিলাদের ব্যাগ কার
• ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছিল কি?

সুধীর ও শঙ্কর পুলিশের জেরায় জানিয়েছে, অসম থেকে পেশাদার দুষ্কৃতী রেলশহরে এসেছিল ৭ জানুয়ারি। তাকে রাখা হয়েছিল মালঞ্চের একটি লজে। ঘটনার দিন সকালে পেশাদার দুষ্কৃতীকে নিয়ে গিয়ে সুব্রহ্মণ্যমকে চিনিয়ে দেয় সুধীর। এর পরে শঙ্করের কোয়ার্টারের পাশের একটি পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে গোটা ঘটনার পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনা মতো ছ’জন হানা দেয় সুব্রহ্মণ্যমের কোয়ার্টারে। পুলিশ সূত্রের খবর, সুব্রহ্মণ্যম চিনে ফেলেছিলেন সুধীরকে। তারপরই তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়।
লুটের পরে সামগ্রীর অধিকাংশ মোহনের কাছে বিক্রি করে তারা। বাকি সামগ্রী নিজেরা ভাগ করে নেয়। খুনের তিনদিনের মাথায় কিনারা। তদন্তের সাফল্যে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, এসডিপিও, আইসি, তদন্তকারী অফিসারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। ধৃতদের এ দিন খড়্গপুর মহকুমা আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে খুন করে ডাকাতির ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৬ নম্বর ধারায় মামলা শুরু করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে এই ধারায় মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। এ দিন আদালতে ধৃত তিনজনকে ১৪দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। তবে বিচারক ধৃতদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Mystery Crime Khargapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE