অভিযান: তমলুকের নকিবসান গ্রামে মদ নষ্ট করছে প্রমীলা বাহিনী।
করোনা সতর্কতায় লকডাউনে সরকারি অনুমোদন পাওয়া সমস্ত মদের দোকান বন্ধ। বন্ধ বার-ও। মদের নেশায় তাই বেপরোয়া মদ্যপেরা। যার জেরে বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে লুকিয়ে মদ-কারবার চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, নদীপথে রাতে জোয়ারের সময় বোঝাই হয়ে আসছে চোলাই। ইতিমধ্যেই মহিষাদল এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু মদের বোতল উদ্ধার করেছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এ বার চোলাই থেকে বেআইনি মদ ব্যবসার বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে উঠল। কোথাও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন মহিলারা। আবার কোথাও রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তৈরি করা হয়েছে চোলাই প্রতিরোধ কমিটি।
তমলুক শহরের সংলগ্ন নকিবসান গ্রামে বেআইনিভাবে এক ব্যক্তির বাড়িতে মদ মজুত করে ব্যবসা করা হচ্ছিল বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ফলে এলাকায় মদ্যপদের উপদ্রব বেড়ে চলায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বাড়ছিল। মঙ্গলবার সকালে ওই মদ ব্যবসায়ীর বাড়ি বাক্সবোঝাই মদের বোতল বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময়েই স্থানীয় কয়েকজন মহিলা হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপরই ক্ষুব্ধ এলাকার মহিলারা জড়ো হয়ে দলবেঁধে ওই বাড়িতে বেআইনিভাবে মজত রাখা প্রায় ১৮ বাক্স (প্রতি বাক্সে ২০টি মদের বোতল ছিল) দেশি মদের বোতল বের করে নষ্ট করে দেন। তবে তার ফাঁকেই ওই মদ ব্যবসায়ী পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ এলাকায় যায়। যদিও মদ ব্যবসায় অভিযুক্তদের কাউকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিন বেআইনিভাবে মদ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযানে সামিল স্থানীয় মহিলা প্রিয়াঙ্কা পাহাড়ির অভিযোগ, ‘‘লকডাউন চললেও পাড়ার এক বাড়িতে বেআইনিভাবে মদের কারবার চলছিল। মদ্যপদের উপদ্রবে এলাকায় অশান্তি বাড়ছিল। পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ সকালে ওই বাড়ি থেকে মদ বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময়েই এলাকার কয়েকজন হাতেনাতে ধরে ফেলে।’’
পুলিশের দাবি, এক ব্যক্তির বাড়িতে বেআইনিভাবে মদ ব্যবসার অভিযোগ ঘিরে গোলমালের খবর পেয়েই এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে তার আগেই বাসিন্দারা বাড়ি থেকে কিছু দেশি মদ উদ্ধার করে নষ্ট করে ফেলে। বেআইনি মদ ব্যবসায় অভিযুক্তকে ধরতে তল্লাশি চলছে।
করোনার সংক্রমণ রুখতে মহিষাদলে রূপনারায়ণ নদের তীরবর্তী একাধিক গ্রামে মঙ্গলবার গঠিত হয়েছে চোলাই ও করোনা প্রতিরোধ কমিটি। রীতিমত সব রাজনৈতিক দলের মানুষের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় করোনা থেকে বাঁচতে এলাকায় চোলাই রুখতে হবে। মহিষাদলের অমৃতবেড়িয়ায় গ্রাম সংসদের তরফে ওই প্রতিরোধ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে স্থানীয় বিশিষ্ট মানুষজনও ছিলেন।
কমিটির সভাপতি মহিষাদল রাজ কলেজের প্রাক্তন প্রধান করণিক নিরঞ্জন মণ্ডল জানান, বিভিন্ন বার বন্ধ। তাই নদীপথে হাওড়া থেকে চোলাই আসছিল। চোলাইয়ের টানে বাড়ছিল বহিরাগতদের আনাগোলা। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও বাড়ছিল। তাই সকলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয় চোলাইকে প্রতিরোধ করে করোনার বিপদকে দূরে রাখার। তার নিরিখেই গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
কী ভাবে আসছে চোলাই?
আবগারি দফতর সূত্রে খবর, চোলাই কারবারিরা জোয়ারের সময় হাওড়া থকে নৌকা ভর্তি চোলাই এনে মাঝনদীতে অপেক্ষা করে। মহিষাদল প্রান্ত থেকে আলোয় সিগনাল দেওয়া হয়। লাল আলো দেখালে নৌকা ফিরে যায়। সবুজ আলো দেখালে নৌকা হোগলা বনে ঢুকে যায়। শুধু তাই নয়, ব্যারেলে ছিপির রঙ আলাদা থাকে। লাল ছিপি, নীল ছিপি বিভিন্ন এলাকার জন্য বরাদ্দ। সেই মতো সেই এলাকায় চোলাই পৌঁছে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মহিষাদলের পূর্ব শ্রীরামপুরে চোলাইয়ের ঠেক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। লক ডাউন পিরিয়ডে বিপুল চাহিদা চোলাইয়ের। ২০০ এমএল পাউচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এই অবস্থায় গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ ও পুলিশ-আবগারি দফতরের সাঁড়াশি অভিযানে চোলাই ব্যবসা কতটা আটকানো যায় সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy