বায়না আসার অপেক্ষায়। মহিষাদলে। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো মানেই ঢাকের ঢ্যাং কুড়াকুড় বাদ্যি। পুজো মানেই ঢাকের তালে ধুনুচি নাচ!
শারদোৎসবের সঙ্গে ঢাক যেন অপরিহার্য। প্রতি বছর তাই পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন ঢাকি পাড়ায় শুরু হয়ে যেত তুমুল ব্যস্ততা। দিনরাত চলত ঢাকের মহড়া। আর আসত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বায়না। ঢাকি পাড়ায় পুজোর প্রস্তুতি দেখে মেতে উঠত কচিকাচারাও। কিন্তু করোনা এ বারের ঢাকি পাড়ার চেনা ছবিটা পাল্টে দিয়েছে। উৎসবের আমেজের বদলে বিষন্নতার ছোয়া ঢাকিদের মনে।
পটাশপুর থানা এলাকার অমরপুর এলাকায় ঢাকিদের গ্রাম বলে পরিচিত। এই গ্রাম থেকে আগে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি দিল্লি, গুজরাত, মহারাষ্ট্র-সহ একাধিক রাজ্যে যেতেন ঢাকিরা। লকডাউনে এবার ভিন্ রাজ্য থেকে এখনও বায়না আসেনি। কলকাতার দু’একটি পুজো মণ্ডেপে যাওয়ার কথা চলছে। তবে সেই আশ্বাসেও দোলাচলে রয়েছেন ঢাকিরা।
অমরপুরে ৩০ থেকে ৪০ জন ঢাক বাজান। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে মহালয়ার পরে দিন থেকে তাঁদের ভিন্ রাজ্যে রওনা দিতে হত। এখন মফঃস্বলের দু’একটি পুজো মণ্ডপে কম টাকায় বায়না ধরেতে হচ্ছে তাঁদের। ঢাকি সুধাংশু ঘোড়াই বলেন, ‘‘পুজোর দেড় মাসও বাকি নেই। এখনও ভিন্ রাজ্য থেকে বায়না আসেনি। বছরের বড় মরসুমে উপার্জনে পথ প্রায় বন্ধের মুখে। চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তবে অনেকে এখনও আশায় বসে রয়েছেন।’’
শিল্প শহর হলদিয়ায় বড় করে হয় বিশ্বকর্মা পুজো। এ বার পুজো হয়তো হবে কার্যত অনাড়ম্বরে। আর দুর্গাপুজোর পরে কালীপুজোর দিকেও চেয়ে থাকেন এই মহকুমার বহু ঢাকি। মহিষাদলের গেঁওখালির শুকলালপুরে ১৫টি ঢাকি পরিবার রয়েছে। এছাড়া, মহিষাদল ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ঢাকি পরিবার রয়েছে। এবার পুজোয় তাঁদের কতটা দরকার পড়বে, সে নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। তাই প্রতি বছরের মতো এ বছর আর ঢাক সারানোর ততটা তোড়জোড় নেই তাঁদের মধ্যে। ঢাকিরা জানাচ্ছেন, চামড়ার দাম আগে ছিল ২৫০ টাকা। এখন তা হয়েছে সাড়ে ৫০০ টাকা। যদি তেমন বায়নায় না মেলে, তা হলে আর করে ঢাক সারানোর দরকার কী— প্রশ্ন ঢাকিদের মনে।
মহিষাদল এলাকার এক ঢাকি সঞ্জয় প্রামাণিক জানাচ্ছেন, আগের বছর ঢাক বাজাতে গিয়েছিলেন কলকাতায়। চারজনে মিলে ৩২ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। সঙ্গে ছিল প্রায় হাজার চারেক টাকা বকশিস। সঞ্জয়ের কথায়, ‘‘ এই মরসুমের জন্য অপেক্ষা করে থাকি। এবার রোজগারটা কী করে হবে বুঝতে পারছি না।’’
সব মিলিয়ে ঢাকি পাড়ায় আগমনীর সুরের আগেই বইছে বিষাদের সুর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy