এইভাবে জেগে উঠছে চর। কোলাঘাটের গৌরাঙ্গ ঘাট এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
ভাঙন রুখতে কোলাঘাটে রূপনারায়ণের তীরে সিল্টেশন পদ্ধতির ব্যবহার করেছিল সেচ দফতর। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাতে মিলল সাফল্য। কোলাঘাটের দিকে রূপনারায়ণের পাড় বরাবর প্রায় ৩০ ফুট চওড়া নতুন চর দেখা দিয়েছে। এতেই আশায় বুক বাঁধছেন কোলাঘাটবাসী।
কোলাঘাটের ঠিক বিপরীত প্রান্তে হাওড়া জেলার দিকে রূপনারায়ণ নদে বছর দশেক আগে একটি চর তৈরি হয়। ধীরে ধীরে সেটি বহরে বেড়েছে অনেকখানি। নদ বক্ষে বিশাল চর জেগে ওঠায় জলের স্রোত কোলাঘাটের দিক দিয়ে সরে আসতে শুরু করে এবং ক্ষরস্রোতে বইতে শুরু করে। এর ফলে রূপনারায়ণের নদী খাত মাঝখান থেকে সরে গিয়েছিল কোলাঘাট শহরের দিকে। যার জেরে প্রতি বছর কোলাঘাট শহর সংলগ্ন এলাকায় নদের বাঁধে বড় বড় ধস নামতে থাকে। ছাতিন্দা থেকে দেনান পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে কোলাঘাট স্টেশনের অদূরে দেনানে রূপনারায়ণের প্রায় দেড়শো মিটার বাঁধ নদ গর্ভে চলে যায়।
ওই ঘটনার পরে রাজ্য সেচ দফতরের ‘রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে’র একটি প্রতিনিধি দল কোলাঘাটের ভাঙন পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলটি 'সিল্টেশন' পদ্ধতির মাধ্যমে চর অপসারণের পরামর্শ দেয়। এই পদ্ধতি অনুযায়ী বাঁশের বড় বড় খাঁচা ভাঙন এলাকা বরাবর স্রোতের মুখে ফেলে দেওয়া হয়। জলের স্রোত বাঁশের খাঁচায় ধাক্কা খেলে জলের মধ্যে থাকা পলি খাঁচার নিচে জমতে শুরু করে। পলি জমে জমে ভাঙনের অংশটি ভরাট হতে শুরু করে। তখন জলের স্রোত ক্রমশ বিপরীত দিকে সরতে থাকবে। আর সেই স্রোতের টানে বিপরীত দিকের চরের বালি ধোওয়া হয়ে সরতে সরতে একদিন পুরো চরটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
প্রথম পর্যায়ে ছাতিন্দা থেকে বাবুয়া পর্যন্ত ৩.৮ কিলোমিটার অংশে বাঁশের খাঁচা ফেলার জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সেচ দফতর। গত বছর থেকে সেই বাঁশের খাঁচা ফেলার কাজ শুরু হয়। এখনও কিছুটা অংশে কাজ বাকি। এর মধ্যেই বছর ঘুরতে না ঘুরতে বাঁশের খাঁচা ফেলার জায়গাগুলিতে চর তৈরি হয়েছে।স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, কোলাঘাট শহর সংলগ্ন এলাকায় রূপনারায়ণ নদের বাঁধ বরাবর অন্তত ৩০ ফুট চওড়া চর তৈরি হয়েছে। চরের বহর ক্রমশ বাড়ছে। কোলাঘাটের বাসিন্দা অসীম দাস বলেন, ‘‘আগে কোলাঘাটের গৌরাঙ্গ ঘাটে নামলেই জলস্তর ছিল এক মানুষ গভীর। বাঁশের খাঁচা ফেলার পর সেই গভীরতা আর নেই। প্রায় ৩০ ফুট নেমে যাওয়ার পর গভীরতা পাওয়া যায়।’’ সেচ দফতরের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা ভাঙন খরা প্রতিরোধ কমিটি।সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘সিল্টেশন পদ্ধতির প্রয়োগ সফল হয়েছে। এর ফলে কোলাঘাটের ভাঙন বন্ধ হবে। আমরা চাই বাবুয়া থেকে ছাতিন্দা পর্যন্তও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভাঙন বন্ধ করা হোক।’’ এ বিষয়ে সেচ দফতরের পাঁশকুড়া-১ শাখার এসডিও নাজেস আফরোজ বলেন, ‘‘সিল্টেশনের ফলে কোলাঘাটের দিকে নতুন চর তৈরি হচ্ছে। শীতকালে চর তৈরি দ্রুত হয়। আমরা আশা করছি এবার বিপরীত দিকের চর ধীরে ধীরে অপসারিত হবে। বাবুয়া থেকে ছাতিন্দা পর্যন্ত অংশেও এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy