Advertisement
০১ জানুয়ারি ২০২৫

কেন্দ্রে পা রেখেই ক্ষোভের মুখে প্রার্থী

প্রার্থী হওয়ার পরে প্রথম দিন এলাকায় পা রেখেই তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন রমাপ্রসাদ তিওয়ারি।গড়বেতার এক সময়ের এই বিজেপি নেতা রাজ্যে পালাবদলের তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে থাকেন মেদিনীপুরে। কিন্তু তিনি প্রার্থী হয়েছেন খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে। এমন ‘বহিরাগত’ প্রার্থীতেই আপত্তি রেলশহরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের।

প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে (মাঝে) ঘিরে বিক্ষোভ খড়্গপুরে।

প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে (মাঝে) ঘিরে বিক্ষোভ খড়্গপুরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

প্রার্থী হওয়ার পরে প্রথম দিন এলাকায় পা রেখেই তৃণমূল কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন রমাপ্রসাদ তিওয়ারি।

গড়বেতার এক সময়ের এই বিজেপি নেতা রাজ্যে পালাবদলের তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে থাকেন মেদিনীপুরে। কিন্তু তিনি প্রার্থী হয়েছেন খড়্গপুর সদর কেন্দ্রে। এমন ‘বহিরাগত’ প্রার্থীতেই আপত্তি রেলশহরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশের।

শুক্রবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে শনিবার খড়্গপুরের খরিদায় তৃণমূলের শহর কমিটির কার্যালয়ে এসেছিলেন রমাপ্রসাদবাবু। সেখানে দলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর সামনেই কর্মীরা প্রার্থীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। একাংশ তৃণমূল কর্মী তো জানিয়েই দেন, এই প্রার্থীকে তাঁরা সমর্থন করবেন না। রমাপ্রসাদবাবু বিক্ষুব্ধদের বসিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেন। তবে লাভ হয়নি। তৃণমূলের শহর নেতা শঙ্কর দে, ছাত্র নেতা রাজা সরকার, কর্মী বিশু অধিকারীরা প্রকাশ্যেই বলেন, “খড়্গপুর শহরের যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে একজনকে এনে প্রার্থী করা হচ্ছে। আমরা আর মেদিনীপুরের নেতাদের এই নিয়ন্ত্রণ মানব না। প্রার্থীর সঙ্গে কোথাও ব্যক্তিগত বিরোধ নেই। তবে এই বঞ্চনার কারণে আমরা এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে পথে নামব।”

খড়্গপুর শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল দীর্ঘদিনের। এক দিকে রয়েছে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অনুগামীরা, উল্টো দিকে জেলা নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের গোষ্ঠী। এখন আবার পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের গোষ্ঠীও মাথা চাড়া দিচ্ছে। তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, এ বার এই তিনজনই খড়্গপুর সদরে প্রার্থিপদ পাওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু সকলকে বাদ দিয়ে রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে প্রার্থী করায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রমাপ্রসাদবাবু কেন শুক্রবার রাতে রেল হাসপাতালের কাছে তৃণমূল কার্যালয়ে গিয়ে জহরলাল পালের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছিলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেবাশিস অনুগামীরা। অবশ্য রমাপ্রসাদবাবু জানান, শুক্রবার দেবাশিস ফোনে জানিয়েছিলেন, ‘বাইরে আছেন’। আর পুরপ্রধান প্রদীপ ফোন ধরেননি। তাই তিনি জহরবাবুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শহরের এক তৃণমূল কর্মী আবার বলেন, “রমাপ্রসাদ তিওয়ারিকে প্রার্থী করায় মনে হয় না আশায় থাকা খোকন (প্রদীপ), মুনমুনদা (দেবাশিস) ওঁর পক্ষে ভোট দেবেন। এই বহিরাগত প্রার্থীকে বাছাই করে কার্যত কংগ্রেসকে এই বিধানসভা উপহার দেওয়া হল।”

তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিসবাবুও এই ক্ষোভ-বিক্ষোভকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, “কর্মীরা হয়তো মনে করেছে শহরের কেউ প্রার্থী হতে পারত। স্বাভাবিকভাবে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।” একই সঙ্গে দেবাশিসবাবু জানাতে ভোলেননি, ‘‘দল যাঁকে যোগ্য মনে করেছে আমি তাঁর পাশে রয়েছি।’’ জহরলালবাবু বলেন, “কর্মীদের ক্ষোভ ঠিক নয়। এ সব সাময়িক। পরে মিটে যাবে।”

যদিও এই ক্ষোভ-বিক্ষোভকে বিশেষ আমল দিচ্ছেন না রমাপ্রসাদবাবুও। তিনি বলেন, “এত বড় দলে কর্মীদের কারও মনে প্রশ্ন থাকতে পারে। মতবিরোধ হতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস কর্মীরা লড়াইয়ের ময়দানে একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন।”

গড়বেতার বাসিন্দা রমাপ্রসাদবাবু এক সময় জেলা বিজেপি-র সভাপতি ছিলেন। পালাবদলের পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ফলে রাজনীতিতে পুরনো হলেও তাঁর লড়াই নেহাত সহজ হবে না। খড়্গপুর সদর বরাবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। এখান থেকে জয়ী প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন ‘চাচা’ হিসেবে সব দলেরই অভিভাবক। খড়্গপুর শহরে তাঁর জনপ্রিয়তা অবিসম্বাদী। রমাপ্রসাদবাবু নিজেও বলছেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে চাচাকে সম্মান করি। কিন্তু শহরে কংগ্রেস কোনও উন্নয়ন করেনি। আমাদের সরকার, আমাদের পুরসভা উন্নয়ন করছে। তাই জয় নিশ্চিত।”

কিন্তু কঠিন আসনে ‘বহিরাগত’ রমাপ্রসাদবাবুকে প্রার্থী করা হল কেন?

তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, প্রথমত রমাপ্রসাদবাবু আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। ফলে, ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরের অবাঙালি ভোটারদের সহজে প্রভাবিত করা যাবে। দ্বিতীয়ত, গত লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় এই কেন্দ্রে ‘লিড’ পেয়েছিল বিজেপি। ফলে, বিজেপি-র পালের হাওয়া টানতে একদা গেরুয়া-শিবিরে থাকা এই প্রার্থী সহায়ক হবেন বলেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করেছেন। তৃতীয়ত, খড়্গপুরে দলের গোষ্ঠী কোন্দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অজানা নয়। জেলায় এসেও তিনি দ্বন্দ্ব রোধের বার্তা দিয়ে গিয়েছেন। সেই কোন্দলে রাশ টানতেই মাথার উপরে বহিরাগত প্রার্থীকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তৃণমূলের একাংশই মনে করছেন।

নিজেকে যদিও ‘বহিরাগত’ বলেও মানতে নারাজ রমাপ্রসাদবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, “আমি এই মেদিনীপুরেই থাকি। খড়্গপুরে বহু আন্দোলনে ছিলাম ও আছি। তাই এই শহরের মানুষ সমর্থন করবেন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy